গর্ভাবস্থার শুরুতে গর্ভধারণ সফল হল কিনা জানতে চিকিৎসকেরা সবচেয়ে বেশি জোর দেন শরীরে এইচসিজি হরমোনের উপস্থিতির উপর। তবে, প্রসূতি বিশেষে এর মাত্রা হেরফের হয়। আবার কী ভাবে গর্ভধারণ হয়েছে, প্রাকৃতিক উপায়ে না সহায়ক গর্ভাধান পদ্ধতিতে, তার উপরেও এইচসিজি-র মাত্রা নির্ভর করে। যেমন, চিরাচরিত আইভিএফ পদ্ধতিতে এইচসিজি বেশি থাকে। কিন্তু আইভিএফ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ভ্রূণ প্রতিস্থাপন (ফ্রোজেন এমব্রায়ো ট্রান্সফার) করা হলে এইচসিজি প্রাকৃতিক গর্ভধারণের মতো স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। কেন এটা হয় বোঝাতে এইচসিজি হরমোন কী ও তার কার্যকারিতা এবং আইভিএফ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল নীচে।
এইচসিজি হরমোন কী
এইচসিজি হরমোনের পুরো কথাটা হল হিউম্যান কোরনিক গোনাডোট্রপিন। এটি ভ্রূণের চারপাশের কোষ থেকে নিঃসৃত হয়, পরে যে কোষগুলি প্ল্যাসেন্টা (বাংলায় ‘গর্ভের ফুল’) তৈরি করে। শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এই হরমোন। গর্ভাবস্থার শুরুতে শরীরে এই হরমোনের মাত্রা খুব বেশি থাকে। বিশেষ করে প্রথম চার সপ্তাহে প্রতি ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে এটি দ্বিগুণ হারে বাড়ে। ছয় সপ্তাহ থেকে এই বাড়ার হারটা কমতে শুরু করে এবং সাধারণত গর্ভাবস্থার ৮-১১ সপ্তাহের মধ্যে এইচসিজি সবচেয়ে বেশি থাকে শরীরে। তিন মাস পর ধীরে ধীরে এই হরমোনের উপস্থিতি কমতে থাকে শরীরে। সব মিলিয়ে বলা যায় গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ভ্রূণের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির হার জানার জন্য এইচসিজি হরমোন হল অন্যতম সূচক।
স্বাভাবিক hCG মাত্রা কি?
গর্ভাবস্থার পর্যায়ের উপর নির্ভর করে hCG-এর স্বাভাবিক মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। গর্ভাবস্থার বিভিন্ন সপ্তাহে সাধারণত hCG এর মাত্রা কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা এখানে রয়েছে:
গর্ভাবস্থার পর্যায়গুলি | এইচসিজি স্তর |
3 সপ্তাহ | 5 – 50 mIU/mL |
4 সপ্তাহ | 5 – 426 mIU/mL |
5 সপ্তাহ | 18 – 7,340 mIU/mL |
6 সপ্তাহ | 1,080 – 56,500 mIU/mL |
7-8 সপ্তাহ | 7,650 – 229,000 mIU/mL |
9-12 সপ্তাহ | 25,700 – 288,000 mIU/mL |
সাধারণত, গর্ভাবস্থার অবস্থা নির্ধারণ করতে এবং গর্ভপাত বা গর্ভপাত সহ সম্ভাব্য গর্ভাবস্থার জটিলতার জন্য নজর রাখতে hCG মাত্রা ব্যবহার করা হয়। অ্যাক্টোপিক গর্ভাবস্থা. তাই, সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে এইচসিজি মাত্রার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণের জন্য উর্বরতা বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা সবসময়ই বাঞ্ছনীয়।
স্বাভাবিক গর্ভধারণে এইচসিজি
নারী দেহে ডিম্বাশয় থেকে প্রতি মাসে একটি করে ডিম ফুটে ফ্যালোপিয়ান টিউবে আসে। এখানেই শুক্রাণুর সঙ্গে মিলনসাধনের পরে ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়। এরপর সেই নিষিক্ত ডিম জরায়ুতে যায়। সেখানে গিয়ে নিষিক্ত ডিমটি জরায়ুর দেওয়ালে নিজেকে প্রতিস্থাপিত করে এবং প্ল্যাসেন্টা তৈরি হয়। এই সময় প্ল্যাসেন্টা থেকে এইচসিজি হরমোন ক্ষরিত হয় যা ভ্রূণকে বেড়ে তোলার সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।
শরীরে এইচসিজি হরমোনের উপস্থিতি মূত্র ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়। চিকিৎসকেরা রক্তে এই হরমোনের উপস্থিতি ও বৃদ্ধির হার পর্যবেক্ষণের জন্য বিটাএইচসিজি পরীক্ষা করতে বলেন। এইচসিজি লেভেলের পরিমাপ হয় মিললি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিটস প্রতি মিলিলিটারে (এমআইইউ/এমএল)। গর্ভাবস্থার কোন দিনে পরীক্ষাটি করা হচ্ছে তার উপরে এর মান নির্ভর করে।
চিরাচরিত আইভিএফ পদ্ধতি
আইভিএফ-এর পুরো কথাটা হল, ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন। ভিট্রো কথার অর্থ শরীরের বাইরে। যে পদ্ধতিতে শরীরের বাইরে কৃত্রিম পরিবেশে জীবন সৃষ্টি করা হয়, তাকে বলে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন। প্রাকৃতিক বা জৈবিক উপায়ে যে সব দম্পতির সন্তান হচ্ছে না তাদের নিজস্ব ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিয়ে (পরিচিত বা অপরিচিত দাতার ডিম্বাণু, শুক্রাণুও হতে পারে) ল্যাবরেটরিতে ভ্রূণ তৈরি করার পর তা মায়ের জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত করা হয় আইভিএফ পদ্ধতিতে। অথবা শুক্রাণুকে সরাসরি ডিম্বাণুতে ইঞ্জেক্ট করে ভ্রূণ তৈরি করা হয় (আইসিএসআই)।
সংরক্ষিত ভ্রূণ প্রতিস্থাপন আইভিএফ পদ্ধতিতে
চিরাচরিত আইভিএফ পদ্ধতিতে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হল, এখানে ভ্রূণটি বাইরে সৃষ্টি হওয়ার কারণে মায়ের শরীরে যে প্রেগন্যান্সি হরমোন তৈরি হওয়ার কথা তা বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। জৈবিক বা প্রাকৃতিক গর্ভধারণের ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি হরমোন বৃদ্ধির হার ভ্রূণের বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে হয়। ঋতুচক্রর স্বাভাবিক নিয়মে গর্ভধারণের পর এই হরমোনাল পরিবর্তন হয়। আইভিএফে দু’ভাবে এই স্বাভাবিকত্ব বিঘ্নিত হয়। এক, এক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট ডিম্বাণু তৈরির জন্য ডিম্বাশয়কে উদ্দীপিত করা হয়। দুই, ডিম্বাণু নিষিক্তকরণে উদ্দীপনার সাহায্য নেওয়া হয়। ফলে মহিলার শরীরের স্বাভাবিক ঋতুচক্রের সঙ্গে বিশেষ এই পরিস্থিতির মেল হয় না। ডিম্বাশয়কে উদ্দীপিত করার ফলে ইস্ট্রোজেন খুব বেড়ে যায় এবং যার জন্য প্রোজেস্টেরনের মাত্রাও দ্রুত বাড়তে থাকে, যেটা এন্ডোমেট্রিয়াল লাইনিং তৈরির প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। প্ল্যাসেন্টার গঠন ও এইসিজি হরমোন উৎপাদনের জন্য সুস্থ স্বাভাবিক এন্ডোমেট্রিয়াল লাইনিং তৈরি হওয়া জরুরি। কিন্তু আইভিএফ-এর ক্ষেত্রে উদ্দীপক ব্যবহারের ফলে এই এন্ডোমেট্রিয়াল লাইনিং বিকাশের হার ভ্রূণের বিকাশের সঙ্গে সহাবস্থান করে না। এই জায়গাগুলি থেকে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের পরেও গর্ভপাতের একটা সম্ভাবনা থেকে যায়।
সেই কারণে এখন সংরক্ষিত ভ্রূণে আইভিএফ (ফ্রোজেন এমব্রায়ো ট্রান্সফার বা এফইটি) করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সদ্য ডিম্বাণুতে তৈরি ভ্রূণ কয়েকদিন পরে প্রতিস্থাপন না করে সংরক্ষণ করে রেখে দেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থায়। চিকিৎসক মহিলার শরীরে হরমোন লেভেল নজরে রাখেন এবং অপেক্ষা করেন কখন আইভিএফ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত উদ্দীপকের জের থেকে বেরিয়ে ওই মহিলার ঋতুচক্র ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের উপযোগী অবস্থায় আসবে।
ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের জন্য এই ছোট্ট একটা সময়ের ব্যবধান গর্ভধারণের সম্ভাবনার হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, আইভিএফ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিণ ভ্রূণ প্রতিস্থাপনে গর্ভধারণের সম্ভাবনা প্রায় জৈবিক উপায়ে গর্ভধারণের সমান। গর্ভপাতের হার তুলনায় কম এবং ভ্রূণের বিকাশের হারও যথাযথ।
সংরক্ষিত ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের পরে এইচসিজি লেভেল
চিরাচরিত আইভিএফ পদ্ধতিতে ডিম্বাশয়কে উদ্দীপিত করার পাশাপাশি ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের জন্য অতিরিক্ত এইচসিজি হরমোন বাইরে থেকে শরীরে দেওয়া হয়। সংরক্ষিত ভ্রূণ প্রতিস্থাপনে তা করা হয় না। ফলে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের দু’সপ্তাহ পরে এইচসিজি লেভেল পরীক্ষা করা হয় যখন, তখন তা মোটামুটি ভাবে জৈবিক উপায়ে গর্ভধারণের মাত্রাতেই থাকে। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও এইচসিজি ৫ এমআইইউ/এমএল-এর কম হলে রেজাল্ট নেগেটিভ এবং ২৫ এর বেশি হলে রেজাল্ট পজিটিভ ধরা হয়।
এইচসিজি লেভেল মনিটর করে গর্ভপাতের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা আন্দাজ করা যায়। যেমন মোটামুটি ভাবে ১৩ দিনের মাথায় এইচসিজি ৮৫ এমআইইউ/এমএল-এর কম হলে গর্ভাপাতের ঝুঁকি ৮৯ শতাংশ রয়েছে ধরা হয়। আবার ১৩ দিনের মাথায় এইচসিজি ৩৮৬ এমআইইউ/এমএল-এর বেশি হলে সুস্থ সন্তানের জন্মের সম্ভাবনা ৯১ শতাংশ রয়েছে ধরা হয়। এই এইচসিজি হরমোনের উপস্থিতি দিয়েই জানা যায় যমজ বা ততোধিক সন্তানের জন্মের সম্ভাবনা আছে কি না। একটি ভ্রূণ থাকলে ১৩ দিনের মাথায় এইচসিজি যেখানে ৩৩৯ এমআইইউ/এমএল, যমজের ক্ষেত্রে তা হবে ৫৪৪ এমআইইউ/এমএল।
যদিও চিকিৎসকেরা এইসিজি হরমোনের মাত্রার চেয়ে কী হারে বাড়ছে তার উপরেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। সংরক্ষিত ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার ১৭ দিনে এইচসিজি ২০০ এমআইইউ/এমএল-এর বেশি থাকলে তা সফল হয়েছে ধরা হয়।
- দিন 1-14 পোস্ট-ট্রান্সফার: একটি IVF FET পরে, আমরা দুই সপ্তাহের অপেক্ষার সময় প্রবেশ করি। যেহেতু hCG ট্রিগার শট ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহার করা হয় না আইভিএফ, প্রাথমিক গর্ভাবস্থার আমাদের প্রধান সূচক হল আপনার রক্তপ্রবাহে hCG মাত্রার স্বাভাবিক বৃদ্ধি। একজন বিশেষজ্ঞ স্থানান্তরের প্রায় দুই সপ্তাহ পরে একটি বিটা-এইচসিজি পরীক্ষার মাধ্যমে এই স্তরগুলি পরিমাপ করেন।
- দিন 13 পোস্ট-ট্রান্সফার: এই মুহুর্তে, hCG স্তর আমাদের প্রথম অর্থপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। একটি ভাল সূচনা 25 mIU/ml-এর বেশি বা সমান স্তর দ্বারা নির্দেশিত হয়, যেখানে 5 mIU/ml-এর নীচের স্তরগুলি প্রায়ই গর্ভধারণের পরামর্শ দেয় না। এছাড়াও, আমরা গর্ভপাতের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে সফল ইমপ্লান্টেশনের সুখকে ওজন করতে শুরু করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, এই পর্যায়ে, 85 mIU/ml এর কম মান গর্ভপাতের বর্ধিত সম্ভাবনা নির্দেশ করতে পারে। অন্যদিকে, 386 mIU/ml এর বেশি মান একটি শক্তিশালী, সুস্থ অগ্রগতি নির্দেশ করতে পারে।
তদ্ব্যতীত, 13তম দিন আপনি এক বা একাধিক সন্তানের আশা করছেন কিনা সে সম্পর্কে প্রাথমিক সূচকগুলি আমাদের সরবরাহ করতে পারে। 339 mIU/mL বা তার কম একটি সিঙ্গলটন গর্ভাবস্থার ইঙ্গিত দেয়, কিন্তু 544 mIU/mL বা তার বেশি গুণিতকের নির্দেশক।
- দিন 15-17 পোস্ট-ট্রান্সফার: এই সময়ে এইচসিজি স্তরের দ্বিগুণ নিরীক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভ্রূণের বিকাশের একটি স্বাভাবিক সূচক। আপনার প্রথম ইতিবাচক পরীক্ষার দুই দিন পরে, hCG স্তর আদর্শভাবে কমপক্ষে 50 mIU/ml পৌঁছাতে হবে, যা আপনার গর্ভাবস্থার জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল বিকাশের ইঙ্গিত দেয়।
- দিন 17: 200 mIU/mL-এর উপরে একটি hCG মান হল আরেকটি ইতিবাচক সূচক, যা গর্ভাবস্থার ভাল বিকাশের পরামর্শ দেয়।
মনে রাখবেন, IVF এবং গর্ভাবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি মহিলার যাত্রা অনন্য। যে হারে hCG মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং পরম মান ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। এই কারণেই এই স্তরগুলি আপনার জন্য বিশেষভাবে কী বোঝায় তা বোঝার জন্য আপনার উর্বরতা বিশেষজ্ঞের দ্বারা চলমান পর্যবেক্ষণ করা অপরিহার্য।
কি কারণগুলি hCG স্তরকে প্রভাবিত করতে পারে?
এই এইচসিজি স্তরগুলিকে কী কী কারণগুলি প্রভাবিত করতে পারে এবং তা পরিবর্তিত করতে পারে তার একটি দ্রুত নজর এখানে:
- নির্ধারিত সময়ের বয়স: এই বয়সটি বোঝায় যে আপনি গর্ভাবস্থায় কতটা দূরে আছেন, 10 থেকে 12 সপ্তাহের মধ্যে এইচসিজির মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় এবং তারপরে নিয়মিত হতে শুরু করে।
- যমজ বা তার বেশি প্রত্যাশিত: আপনার এইচসিজি মাত্রা উচ্চতর দিকে হতে পারে কারণ প্রতিটি ছোট হরমোন গণনা যোগ করে।
- মোলার গর্ভাবস্থা: কখনও কখনও, মোলার প্রেগন্যান্সির মতো অস্বাভাবিক গর্ভাবস্থা আপনার এইচসিজির মাত্রা এমনভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে যেভাবে আপনি একটি সাধারণ গর্ভাবস্থার জন্য আশা করেন না।
- একটোপিক গর্ভাবস্থার সতর্কতা: যদি গর্ভাবস্থা একটি চক্কর নেয় এবং স্বাভাবিকের মতো জরায়ুতে বাসা বাঁধে না, তবে এইচসিজির মাত্রা আশানুরূপ বাড়তে পারে না, তাই এটির দিকে নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
- মাতৃপক্ষের প্রভাব: বিশ্বাস করুন বা না করুন, আপনার বয়স এবং ওজন আপনার এইচসিজি স্তরে একটি ভূমিকা পালন করতে পারে। তা ছাড়াও, আপনার শরীর কীভাবে গর্ভাবস্থার ঘড়ি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় (অর্থাৎ ইমপ্লান্টেশন সময়) তাও একটি পার্থক্য করতে পারে।
- ওষুধের মিশ্রণ: উর্বরতার ওষুধগুলি আপনার এইচসিজি স্তরকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই আপনার ফলাফলগুলি ব্যাখ্যা করার সময় এটি বিবেচনা করার মতো কিছু।
- ইমপ্লান্টেশন সময়: যদি আপনার গর্ভাবস্থার তারিখগুলি সঠিকভাবে বাছাই করা না হয়, তাহলে এটি আপনার এইচসিজি পড়ার প্রত্যাশাকে ঝেড়ে ফেলতে পারে।
- অসম্পূর্ণ গর্ভপাত: কঠিন সময়ে, একটি অসম্পূর্ণ গর্ভপাতের মতো, এইচসিজি স্তরগুলি বিভ্রান্তিকর হতে পারে এবং সতর্ক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন।
- প্লাসেন্টা সম্পর্কিত সমস্যা: কখনও কখনও, প্লাসেন্টা নিজেই আপনার hCG মাত্রা প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে যদি জটিলতা থাকে।
কেন IVF-FET এর পরে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা প্রয়োজন?
IVF হিমায়িত ভ্রূণ স্থানান্তরের পরে, গর্ভাবস্থা পরীক্ষা সহায়ক প্রজননের একটি অপরিহার্য অংশ। এই পরীক্ষাটি সাধারণত “দুই-সপ্তাহ অপেক্ষার” সময় পরিচালিত হয়, যা ভ্রূণ স্থানান্তরের 10-14 দিন পরে ঘটে। পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল প্রস্রাব বা রক্তে বিটা-হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (এইচসিজি) এর ঘনত্ব নির্ধারণ করা।
জরায়ু আস্তরণে স্থানান্তরিত ভ্রূণের সফল ইমপ্লান্টেশন একটি ইতিবাচক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ফলাফল দ্বারা নির্দেশিত হয়। পিতামাতা হওয়ার প্রক্রিয়ায় এটি একটি রোমাঞ্চকর মোড়। গর্ভাবস্থার কার্যকারিতা এবং অগ্রগতি যাচাই করার জন্য, রক্ত পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসাউন্ড সহ পর্যবেক্ষণ সহ একটি সঠিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
অন্যদিকে, একটি নেতিবাচক পরীক্ষার ফলাফল খুব বিরক্তিকর হতে পারে, তবে এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে IVF সাফল্যের হার ভিন্ন। অতএব, আপনার উর্বরতা ডাক্তারের সাথে কথা বলা একটি সমাধান হতে পারে, তারা আপনাকে সর্বোত্তম পদক্ষেপে সহায়তা করবে, যার মধ্যে একটি কার্যকর গর্ভাবস্থার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য আরও IVF চক্র করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
১) আইভিএফ-এ ফ্রেশ আর ফ্রোজেন এমব্রায়ো ট্রান্সফারে এইচসিজি লেভেলে কী পার্থক্য থাকে?
সাধারণত চিরাচরিত (ফ্রেশ) পদ্ধতিতে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনে এইচসিজি লেভেল একটু বেশি থাকে কারণ এক্ষেত্রে এইচসিজি বাইরে থেকে প্রয়োগ করা হয় পূর্ববর্তী ধাপে। সেই জন্যই অনেক সময় ফলস পজিটিভ প্রেগন্যান্সি রিপোর্টও আসে। অন্যদিকে, সংরক্ষিত ভ্রূণ (ফ্রোজেন)প্রতিস্থাপনে শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য সময় দেওয়া হয় এবং বাইরে থেকে এইচসিজি ট্রিগার শট দেওয়া হয় না প্রতিস্থাপনের জন্য। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে গর্ভধারণের যে মাত্রা থাকা দরকার তাই থাকে এক্ষেত্রে (২৫ এমআইইউ/এমএল-এর বেশি এবং প্রতি দু’দিনে দ্বিগুণ)।
২) এইচসিজি লেভেল বেশি থাকার অর্থ কী?
প্রথমত, এক এক জন মহিলার শরীর এক এক রকম। তাই এইচসিজি-র মাত্রা প্রসূতি বিশেষে হেরফের হয় এবং বিষয়টা আপেক্ষিক। তবে, সাধারণ ভাবে এইচসিজি বেশি আছে মানে গর্ভধারণ স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু, এইচসিজি খুব বেশি হলে সেটা যমজ বা একাধিক সন্তানের ইঙ্গিত দেয়। আর বেশি এইচসিজি থেকে আগত সন্তানের ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকিও থাকে। এই সব কারণে, এইচসিজির মাত্রা ঠিক না বেশি না কম, এই চিন্তা চিকিৎসকের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।
৩) এইচসিজি লেভেল কম থাকার অর্থ কী?
এক্ষেত্রেও একই বক্তব্য, কম এইচসিজি নানা কারণে হতে পারে। তাই এইচসিজি বেশি থাকুক বা কম, ঝট করে নিজে থেকে কোনও সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়। কারণ এইচসিজি কী হারে বাড়ছে সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং চিকিৎসকেরা এই হিসাব বেশি ভাল করবেন। তবুও বলা যেতে পারে, এইচসিজি প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটা কম থাকলে সব কিছু ঠিক নেই অনুমান করা হয়। গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকতে পারে আবার ইকোপ্টিক প্রেগন্যান্সিও হতে পারে।