ডার্ময়েড সিস্ট, লক্ষণ, কারণ, চিকিত্সা এবং এর ধরন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করুন
- Published on August 29, 2023
সিস্ট শব্দটা শুনলেই অনেকে ঘাবড়ে যান। কিন্তু সিস্টের প্রকৃতি না জেনে অযথা ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। সিস্ট হল তরল পদার্থ পূর্ণ থলি বিশেষ। এটা ঠিক, সিস্ট মানে টিউমার। কারণ শরীরের ভিতরের অংশ দখল করে থাকা যে কোনও উপবৃদ্ধিই টিউমার। কিন্তু টিউমার মানেই ক্যানসার নয়। অধিকাংশ সিস্ট বিনাইন অর্থাৎ ক্যানসারহীন। সিস্টের ভিতরের তরল রক্ত হতে পারে, আবার সাধারণ বা সংক্রামিত জলও হতে পারে। শুনতে অবাক লাগলেও অনেক সময় সিস্টের মধ্যে দাঁত, চুল, মাংসের টুকরো, হাড় থাকে। এর নাম ডার্ময়েড সিস্ট। বিষয়টি অদ্ভূত হলেও স্বস্তির কথা, ডার্ময়েড সিস্ট সাধারণত ক্যানসারহীন এবং ক্ষতিকর নয়।
Table of Contents
ডার্ময়েড সিস্ট কী
ডার্ময়েড সিস্ট হল ত্বকের মধ্যে বা ঠিক নীচে অবস্থিত চটচটে পদার্থ ভরা থলি, যার ভিতরে দাঁত, চুল, ঘর্মগ্রন্থি, মাংস ও হাড়ের টিস্যু পর্যন্ত থাকে। মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বিকাশের সময়ের বিভ্রাটবশত এই সিস্ট তৈরি হয়। অর্থাৎ, এটি জন্মগত। বড়বেলায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। শরীরের যে কোনও জায়গায় এই সিস্ট হতে পারে। মুখমণ্ডলে ভুরুর কাছে, ঘাড়, পিঠের নীচের দিকে শিরদাঁড়ায় এবং ডিম্বাশয়ের উপরিভাগে বা ভিতরে এই সিস্ট বেশি হয়। ক্ষতিকর না হলেও যেহেতু এই সিস্ট আপনা থেকে বিনষ্ট হয় না, সেহেতু অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। নয়তো পরবর্তীকালে আকারে বেড়ে বা পেকে গিয়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে জটিলতা ডেকে আনতে পারে।
ডার্ময়েড সিস্টের প্রকারভেদ
শরীরের যে কোনও অংশে ডার্ময়েড সিস্ট হতে পারে। অবস্থান অনুযায়ী ডার্ময়েড সিস্টের প্রকারভেদগুলি হল-
১) পেরিঅরবিটাল ডার্ময়েড সিস্ট- এই প্রকারের সিস্ট সাধারণত ডান ভুরুর ডান দিকে বা বাঁ ভুরুর বাঁ দিকে থাকে। জন্মের সময় কিংবা ছোটবেলাতেই এটি নজরে আসে। যদিও এর জন্য শিশুর দৃষ্টিশক্তি বা স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে না। তবে অনেকসময় আকারে বেড়ে বা সংক্রমণের জন্য জটিলতার সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিস্টটি অপসারণ করা দরকার।
২) ওভারিয়ান ডার্ময়েড সিস্ট- এই সিস্টগুলো ডিম্বাশয়ের উপরিভাগে বা ভিতরে গজিয়ে ওঠে। যদিও ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতার সঙ্গে এর বিশেষ সম্পর্ক থাকে না। শরীরের ভেতরে এই সিস্ট থাকে বলে ছোটবেলায় সাধারণত ধরা পড়ে না। বয়সকালে শ্রোণীদেশ (পেলভিক) পরীক্ষার সময়ে ধরা পড়ে।
৩) স্পাইনাল ডার্ময়েড সিস্ট- মেরুদণ্ড বা শিরদাঁড়াতেও ডার্ময়েড সিস্ট থাকতে পারে। সাধারণ ভাবে এটা বাড়ে না বা ছড়িয়ে পড়ে না। ফলে এটি থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা কম এবং অধিকাংশ সময়েই উপসর্গহীন। তবে, আকারে বেড়ে মেরুদণ্ডের নার্ভের উপর এটি চাপ সৃষ্টি করলে অস্ত্রোপচার করা দরকার।
এছাড়াও শরীরের অন্য অংশে ডার্ময়েড সিস্ট থাকতে পারে, যেগুলি বিরল বা খুব কম দেখা যায়। যেমন, চোখের উপরিভাগে
এপিবুলবার ডার্ময়েড সিস্ট, ব্রেনের ভিতরে ইনট্রাক্রনিয়াল ডার্ময়েড সিস্ট, নাকের ভিতরে নাজ়াল সাইনাস ডার্ময়েড সিস্ট, অক্ষিকোটরের হাড়ে অরবিটাল ডার্ময়েড সিস্ট।
কী কারণে ডার্ময়েড সিস্ট হয়
মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বিকাশের সময়ের বিভ্রাট বা ত্রুটি থেকে ডার্ময়েড সিস্টের জন্ম। ঠিক কী কারণে এটা হয় স্পষ্ট নয়। তবে, পেরিঅরবিটাল ডার্ময়েড সিস্ট তৈরি হয় যখন ত্বকের স্তরগুলি যথাযথ ভাবে বেড়ে ওঠে না। ত্বকের কোষ ও অন্যান্য উপাদানগুলি একটি থলিতে বন্দি হয়ে ত্বকের উপরিভাগে সিস্টের আকার নেয়। ত্বকের কোষসমূহ দিয়ে শরীরের ভিতরের অঙ্গেও সিস্ট তৈরি হতে পারে। ওভারিয়ান ডার্ময়েড সিস্ট এই ভাবেই তৈরি হয়। আবার ভ্রূণের বিকাশের সময় নিউরাল টিউবের কোনও অংশ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ না হলে সেখানে ডার্ময়েড সিস্ট তৈরি হয়। এটিই পরে শিশুর মেরুদণ্ডে পরিণত হয় এবং তখন সেখানে স্পাইনাল ডার্ময়েড সিস্ট দেখা যায়।
ডার্ময়েড সিস্টের লক্ষ্মণ
ডার্ময়েড সিস্ট জন্মগত অর্থাৎ জন্মের সময় থেকেই এটি উপস্থিত থাকে শরীরে। কিন্তু সবসময় জন্মের সময়েই সিস্টটি নজরে না আসতে পারে। বিশেষ করে ত্বকে না হয়ে সিস্টটি যদি ভিতরের কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে হয়। সেক্ষেত্রে প্রথমে বাইরে থেকে কোনও লক্ষ্মণ না থাকলেও পরে সিস্টটি আকারে বাড়তে থাকলে লক্ষ্মণগুলো নজরে আসে।
- পেরিঅরবিটাল ডার্ময়েড সিস্টের লক্ষ্মণ- ত্বকের উপরিভাগের কাছে থাকে বলে এই সিস্টের উপস্থিতি বাইরে থেকে ফোলা ভাব দেখে বোঝা যায়। অনেকসময় খুব ছোট সিস্ট হলে বোঝা যায় না। পরে আকারে বেড়ে গেলে নজরে আসে বা পেকে সেখান থেকে সংক্রমণ হলে পর জানা যায়। এমনিতে সিস্ট সংশ্লিষ্ট এলাকার চামড়ার রঙে হলদে ভাব থাকলেও সংক্রমণ হলে তা লালচে হয়ে যায়।
- ওভারিয়ান ডার্ময়েড সিস্টের লক্ষ্মণ- আকারে খুব বেশি বেড়ে না গেলে এই সিস্টের কোনও লক্ষ্মণ বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তবে আকারে বাড়তে থাকলে তলপেটে ব্যাথা ও ফোলাভাব অনুভূত হয়। অনেকসময় এ থেকে মাথা ব্যাথা, বমি ভাব বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যৌনসংসর্গের সময় ব্যাথাও হতে পারে
- স্পাইনাল ডার্ময়েড সিস্টের লক্ষ্মণ- এক্ষেত্রে সিস্টটি যতক্ষণ না বেড়ে স্পাইনাল কর্ড বা নার্ভের উপরে চাপ সৃষ্টি করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সিস্টের উপস্থিতি জানা যায় না। সিস্টের অবস্থান এবং আকার অনুযায়ী নানারকমের লক্ষ্মণ দেখা দেয় শরীরে। যেমন, হাত এবং পায়ে দুর্বলভাব, ব্যাথা, চলাফেরায় অসুবিধা, মূত্রত্যাগে অসংযম।
ডার্ময়েড সিস্ট নির্ণয়
মুখ, ঘাড় বা বুকের অংশে ত্বকের উপরিভাগে সিস্ট থাকলে তা বাইরে থেকে চোখে পড়ে। স্পর্শ করে চিকিৎসকেরা এই ধরনের সিস্টের আকার ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন। তবুও সংবেদনশীল এলাকায় সিস্টটি থাকলে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করার পর ত্রিমাত্রিক ছবি দেখে নিশ্চিত হন চিকিৎসকেরা। বিশেষ করে স্পাইনাল ডার্ময়েড সিস্ট অপসারণের আগে এই পরীক্ষা জরুরি। ডিম্বাশয়ের সিস্টের জন্য পেলভিক আলট্রাসাউন্ডের সাহায্য নেওয়া হয়। এছাড়া ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ডও করা হয় অনেক সময়। কোনও কারণে আলট্রাসাউন্ডে ঠিক মতো তথ্য না মিললে এমআরআই করা হয়। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এর সাহায্য নিতে হয়।
ডার্ময়েড সিস্টের চিকিৎসা
সিস্ট যেখানেই হোক না কেন এটির হাত থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল অস্ত্রোপচার। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ঝট করে অস্ত্রোপচার না করে ভাল ও খারাপ দিকগুলি খতিয়ে দেখা হয় আগে। যেমন, সিস্ট থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা কতটা, শিশুটি আপদে অস্ত্রোপচারের ঝক্কি সামলাতে পারবে কিনা ইত্যাদি। অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে আগে কী করণীয়, কখন শেষ খেতে হবে বা কোন ওষুধ বন্ধ করতে হবে জানিয়ে দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে। ভুরুর নীচে ছোট্ট একটু কেটে পেরিঅরবিটাল ডার্ময়েড সিস্ট অপসারণ করা হয়। আধ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে না সাধারণত। তুলনায় সামান্য জটিল ডিম্বাশয়ের সিস্ট অস্ত্রোপচার। ওভারিয়ান সিস্টেক্টোমি পদ্ধতিতে ডিম্বাশয় থেকে শুধুমাত্র সিস্ট বাদ দেওয়া যায়। এতে প্রজননক্ষমতায় প্রভাব পড়ে না। কিন্তু, সিস্ট খুব বড় হলে বা জটিল ভাবে ভিতরের জায়গা জুড়ে থাকলে তখন ডিম্বাশয়-সহ কেটে বাদ দিতে হয় (উফোরেক্টোমি)। ল্যাপারোস্কোপি বা ল্যাপারোটোমি প্রযুক্তিতে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। মেরুদণ্ডে ডার্ময়েড সিস্ট অপসারণের জন্য মাইক্রোসার্জারি করা হয়। এই অস্ত্রোপচারের পর সাধারণত এক দিন হাসপাতালে রেখে দেওয়া হয় পর্যবেক্ষণের জন্য। অনেকসময় পুরো সিস্টটা হয়তো বাদ দেওয়া যায় না। নার্ভের ক্ষতি এড়াতে যতটা সম্ভব সাবধানতার সঙ্গে কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয় এবং পরে নিয়মিত মনিটরিং করে দেখা হয় সিস্ট কী অবস্থায় রয়েছে। মোটামুটি ভাবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগে এই ধরনের অস্ত্রোপচার থেকে পুরোপুরি সেরে যেতে।
মোটের উপর বলা যায় ডার্ময়েড সিস্ট ক্ষতিকর না হলেও আগামী দিনে বিপদের ঝুঁকি এড়াতে তা অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়ে দেওয়া ভাল। নয়তো পরে সিস্টটি পেকে গিয়ে আশপাশে সংক্রমণ ছড়াতে পারে বা আরও বড় কোনও বিপদ ডেকে আনতে পারে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নমালা
১) ডিম্বাশয়ে ডার্ময়েড সিস্ট থাকলে কী ক্ষতি হতে পারে?
ডিম্বাশয়ে ডার্ময়েড সিস্ট সাধারণত ক্ষতিকর নয়। তবে সময়ে সঙ্গে এগুলির আকার বাড়তে থাকে বলে অনেক জটিলতা আসতে পারে। ডিম্বাশয়ের অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে এর জেরে। অনেকসময় এর জন্য ডিম্বাশয়ে প্যাঁচ (টর্সন) লেগে যায়। তখন রক্ত চলাচলে বিঘ্ন হয়। এক্ষেত্রে সন্তানধারণে অক্ষমতার সমস্যা হতে পারে। কখনও ডার্ময়েড সিস্টটি পেকে ফেটে যায় ডিম্বাশয়ের ভিতরে। এক্ষেত্রে সিস্টের ভিতরের পদার্থগুলি প্রকৃতির নিয়মে শরীর শোষণ করে নেয়। কিন্তু অনেকসময় পেকে যাওয়া সিস্ট থেকে ইনফেকশন হয়ে যায় ভিতরে। তখন চিকিৎসা দরকার। এমনিতে ওভারিয়ান ডার্ময়েড সিস্ট থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা ২ শতাংশেরও কম। তবে, ৪৫-এর বেশি বয়স হলে বা সিস্ট খুব দ্রুত বাড়তে থাকলে ঝুঁকি থাকে ক্যানসারের।
২) ডার্ময়েড সিস্টের ভিতরে দাঁত, চুল ইত্যাদি থাকে কেন?
ডার্ময়েড সিস্টের জন্ম ‘জার্ম সেল’ (যা পরে প্রজননকোষে পরিণত হয়) থেকে। জার্ম সেলের তিনটে লেয়ার বা স্তর থাকে যেগুলি ভ্রূণের বিকাশের সময় ধীরে ধীরে পরিষ্ফূট হয়- ১) এক্টোডার্ম (ত্বক, চুল, ঘর্মগ্রন্থি ও দাঁত হয়), ২) মেসোডার্ম (পেশী ও সংশ্লিষ্ট টিস্যু তৈরি করে), ৩) এন্ডোডার্ম (ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদন্ত্র-সব ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি করে)। এই লেয়ারগুলি যথাযথ ভাবে না বেড়ে এলোমেলো ভাবে বাড়তে থাকলে পরিণত টিস্যুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডার্ময়েড সিস্ট তৈরি করে। ডার্ময়েড সিস্টের মধ্যে ত্বক, চুল, দাঁত, নার্ভ এমনকী ব্রেনের টিস্যুও উপস্থিত থাকে এই কারণে। সিস্টে উপস্থিত ঘর্মগ্রন্থি থেকে তৈলাক্ত তরল পদার্থ নিঃসৃত হয়। একে বলে সিবাম। এর জন্যই সিস্টটি আকারে বাড়তে থাকে ক্রমশ।
৩) ডিম্বাশয়ে ডার্ময়েড সিস্ট বাদ দেওয়া কী জরুরি?
না, সিস্ট থাকলেই যে সেটি অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হবে এমনটা নয়। যদি আকারে সেটি বেড়ে যায় (৫ সেমির বেশি ব্যাসার্ধ) বা শরীরে অস্বস্তি হয়, ডিম্বাশয়ে প্যাঁচ বা টর্সন দেখা দেয় কিংবা সিস্টটি ম্যালিগন্যান্ট হয়, তাহলে অস্ত্রোপচার জরুরি।
Related Posts
Written by:
Dr. Swati Mishra
Consultant
Dr. Swati Mishra is an internationally trained obstetrician-gynecologist and reproductive medicine specialist Her diverse experience, both in India and the USA, has positioned her as a respected figure in the field of IVF. expert in all forms of laparoscopic, hysteroscopic, and surgical fertility procedures which includes IVF, IUI, Reproductive Medicine and Recurrent IVF and IUI Failure.
Over 18 Years of Experience
Kolkata, West Bengal
Our Services
Fertility Treatments
Problems with fertility are both emotionally and medically challenging. At Birla Fertility & IVF, we focus on providing you with supportive, personalized care at every step of your journey towards becoming a parent.Male Infertility
Male factor infertility accounts for almost 40%-50% of all infertility cases. Decreased sperm function can be the result of genetic, lifestyle, medical or environmental factors. Fortunately, most causes of male factor infertility can be easily diagnosed and treated.We offer a comprehensive range of sperm retrieval procedures and treatments for couples with male factor infertility or sexual dysfunction.