ভূমিকা
মহিলাদের প্রজনন তন্ত্রের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে ডিম্বাশয়ের কার্যাবলী ও অন্যান্য অবদানের কথা ভেবে দেখলে সত্যিই বিস্মিত হয়ে যেতে হয়। সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে, মহিলাদের প্রজনন তন্ত্রে বেশ কয়েকটি অঙ্গ একত্রে একে-অপরের সাথে কাজ করে একটি জটিল সিস্টেম গঠন করে। এই গঠনতন্ত্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল ডিম্বাশয়। কিন্তু, ডিম্বাশয় বলতে আসলে কোন অঙ্গকে বোঝায়? এই ব্লগে ডিম্বাশয়ের কার্যকলাপ ও তাৎপর্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় এক্সপ্লোর করে দেখব এবং তার সাথে সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের বজায় রাখার বিভিন্ন উপায়ের ব্যাপারেও আলোচনা করা হবে।
মৌলিক বিষয়গুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকুন
মহিলাদের জরায়ুর দুই দিকে পেলভিস অঞ্চলে ছোট আকারের, বাদামের মতো আকৃতি-বিশিষ্ট অঙ্গই হল ওভারি বা ডিম্বাশয়। মহিলাদের প্রজনন চক্র জুড়ে ডিম (ওভা) ও ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোন উৎপাদন ও তার ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে ডিম্বাশয় গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
ডিম্বাশয়ের প্রধান প্রধান কার্যগুলি হল:
- ডিম উৎপাদন:ডিম্বাশয়ে অসংখ্য ফলিকল থাকে। এগুলি হল অপূর্ণ ডিমের জন্য এক ধরনের আবাস স্থলের মতো। প্রতিটি ঋতুচক্রের সময় প্রতিটি ফলিকল আকারে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় এবং তার থেকে একটি পূর্ণ সাইজের ডিম নির্গত হয়। এই প্রক্রিয়াকেই ‘ওভিউলেশন’ বলা হয়।
- হরমোন উৎপাদন: ওভারি ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোন তৈরি করে যেগুলি ঋতুচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
- প্রজননের কালের সময়সীমা: ডিম্বাশয়ে একটি সীমিত সংখ্যক ডিমই থাকে এবং ডিমের ক্ষয় হয়ে যাওয়াই ডিম্বাশয়ের প্রজনন সংক্রান্ত ক্ষমতার সমাপ্তি বলে গণ্য করা হয় যাকে সাধারণ ভাষায় ‘মেনোপজ’ বলে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেওয়া
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ফার্টিলিটির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)-এর মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে নিয়মিত ‘ওভিউলেশন’ হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় এবং গর্ভধারণ করাও বিশেষভাবে সমস্যাসঙ্কুল হয়ে পড়ে। একইভাবে, স্বাভাবিক বয়সের আগেই প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ইনসাফিসিয়েন্সি (POI)-এর মতো কিছু হলে তার ফলে 40 বছর বয়সের আগেই আগাম মেনোপজের মতো সমস্যা দেখা দেয় যা ফার্টিলিটি সংক্রান্ত বিষয়ের উপরেও প্রভাব বিস্তার করে।
ফার্টিলিটি চিকিৎসার বিভিন্ন বিকল্প
ওভারি বা ডিম্বাশয় সংক্রান্ত সমস্যার কারণে আপনি যদি ফার্টিলিটির ক্ষেত্রে কোনও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, তাহলে বেশ কতগুলি চিকিৎসা বিকল্প উপলভ্য আছে যা আপনার সুখী পরিবারের স্বপ্নকে সাকার করে তুলতে সহায়ক হবে। নিচে কিছু সাধারণ ফার্টিলিটি চিকিৎসা বিকল্পের কথা সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:
- ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন (IUI): এই পদ্ধতিতে ইউটেরাস বা জরায়ুতে সরাসরি রেডি করা স্পার্ম বা শুক্রাণু প্লেস করা হয় এবং তার ফলে ফার্টিলাইজেশনের সম্ভাবনা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
- ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF): আই.ভি.এফ. (IVF) হল আরও উন্নত একটি ফার্টিলিটি চিকিৎসা বিকল্প য়াতে শরীরের বাইরে কোনও ল্যাবরেটরিতে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুকে একে-অপরের সাথে মিলন করানো হয় এবং তারপরে সেই মিলনের ফলে তৈরি হওয়া এম্ব্রায়ো বা ভ্রূণকে জরায়ুর ভিতরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
- এগ ফ্রিজিং: ভবিষ্যতে ফার্টিলিটি সংক্রান্ত সক্ষমতার ব্যাপারে যাঁদের মনে কোনও উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা থাকে, তাঁদের জন্য ‘এগ ফ্রিজিং’ সংক্রান্ত পরিষেবা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যপ্রদ ডিম সংরক্ষণ করার একটি সুযোগ প্রদান করে।
ওভারি বা ডিম্বাশয়ের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখুন
প্রজননতন্ত্রের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বজায় রাখার পিছনে ডিম্বাশয়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখা অত্যাবশ্যক। ডিম্বাশয়ের স্বাস্থ্য অপ্টিমাইজ করা বজায় রাখার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে এমন কিছু সহায়ক পরামর্শ এখানে দেখানো হল:
- স্বাস্থ্যপ্রদ জীবনশৈলি সংক্রান্ত বিকল্প: নিয়মিত ব্যায়াম করা, একটি সুষম ডায়েট বজায় রাখা ও স্ট্রেস লেভেলকে ম্যানেজ করা ডিম্বাশয়ের কার্যাবলীর উপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- নিয়মিত চেক-আপ করানো: স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীর সাথে নিয়মিত ভিজিটের সময় শিডিউল করুন যাতে আপনার প্রজনন সংক্রান্ত স্বাস্থ্য মনিটর করা যায় এবং কোনও সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধানের উপায়ও খুঁজে বের করা যায়।
- আগাম শনাক্তকরণ: অনিয়মিত পিরিয়ড বা ঋতুচক্র, পেলভিস এলাকায় যন্ত্রণার অনুভূতি বা অস্বাভাবিক রক্তপাতের মতো ডিম্বাশয়ের সমস্যার সম্ভাব্য লক্ষণসমূহ সম্পর্কে আপনাকে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। এইসব সমস্যাকে পর্যবেক্ষণ করে রোগের আগাম শনাক্তকরণ এবং অবিলম্বে তার চিকিৎসা করালে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
- ধূমপান পরিহার করুন: ধূমপানের কারণে ফার্টিলিটির কোয়ালিটি হ্রাস ও স্বাভাবিক বয়সের অনেক আগেই মেনোপজ হওয়ার মতো বিষয় হতে পারে। ধূমপানের অভ্যাস পরিহার করলে ডিম্বাশয়ের কার্যকলাপ এবং এর ফলস্বরূপ সামগ্রিক প্রজনন সংক্রান্ত স্বাস্থ্যও আরও উন্নত হতে পারে।
উপসংহার
যেসব মহিলাগণ গর্ভধারণের জন্য প্রয়াস করে চলেছেন অথবা স্বাভাবিক নিয়মের অধীনে স্বাস্থ্যপ্রদ প্রজনন স্বাস্থ্য বজায় রাখতে চান, তাঁদের জন্য ডিম্বাশয়ের কার্যকলাপ ও সম্পূর্ণ প্রজনন প্রক্রিয়ায় এই অঙ্গটির ভূমিকা কী তা ভালো করে বোঝা অবশ্যই প্রয়োজন। আপনার ডিম্বাশয়ের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে, মেডিকেল সংক্রান্ত উপযুক্ত পরিচর্যা গ্রহণ করে এবং আপনার চারপাশে উপলভ্য চিকিৎসা প্ল্যানগুলিকে এক্সপ্লোর করার মাধ্যমে আপনি নিজের ফার্টিলিটি সংক্রান্ত প্রয়াসকে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
আপনি যদি উর্বরতা সম্পর্কিত কোনও সমস্যার সম্মুখীন হন তবে বিড়লা ফার্টিলিটি এবং আইভিএফ। (IVF) ক্লিনিক যেখানে আপনাকে একটি সুখী পরিবারের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আপনার শারীরিক ও চিকিৎসা অবস্থা অনুযায়ী সামগ্রিক পরিষেবা এবং কাস্টমাইজড চিকিত্সা পরিকল্পনা প্রদান করা হয়। আরও জানতে বিড়লা ফার্টিলিটি এবং আইভিএফ-এ যান এবং একটি পরামর্শের সময়সূচী করুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
- ওভারি বা ডিম্বাশয়ের কার্যকলাপের মধ্যে কী কী বিষয় পড়ে?
ডিম্বাশয় হল মহিলাদের প্রজনন তন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর প্রাথমিক কাজটিই হল ফার্টিলাইজেশনের জন্য ডিম তৈরি করা ও তা রিলিজ করা। এছাড়াও, ডিম্বাশয়ে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোনও তৈরি হয়ে থাকে যা ঋতুচক্রকে নিয়ন্ত্রিত করে এবং তার দ্বারা গর্ভধারণের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- মহিলাদের শরীরে ক’টি করে ডিম্বাশয় থাকে?
সাধারণত মহিলাদের শরীরে জরায়ুর দুই পাশে একটি করে মোট দু’টি ডিম্বাশয় থাকে। এই বাদামের মতো দেখতে অঙ্গগুলি মহিলাদের পেলভিস অঞ্চলে থাকে এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের দ্বারা এগুলি জরায়ুর সাথে যুক্ত থাকে।
- ডিম্বাশয়ে কোনও সমস্যা থাকলে তা কি ফার্টিলিটির ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব ফেলতে পারে?
হ্যাঁ। ডিম্বাশয়ের বেশ কিছু পরিস্থিতি ফার্টিলিটি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হওয়া, এন্ডোমেট্রিওসিস ও সঠিক সময় অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে মেনোপজ হওয়ার অনেক আগেই ওভারির কার্যকলাপে ব্যর্থতা দেখা যাওয়ার মতো কিছু পরিস্থিতি স্বাভাবিক ওভিউলেশন প্রক্রিয়াতে ব্যাঘাত ঘটায় ও ডিমের কোয়ালিটির উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আধুনিকতম ফার্টিলিটি চিকিৎসা এইসব সমস্যার মধ্যে সিংহভাগ সমস্যারই খুব ভালোভাবে সমাধান করতে পারে এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনাকেও আরও উন্নত করে তোলে।
- পুরুষদেরও কি ডিম্বাশয় থাকে?
না, পুরুষদের শরীরে কোনও ডিম্বাশয় থাকে না। ডিম্বাশয় শুধুমাত্র মহিলাদের মধ্যেই দেখা যায় এবং এর মুখ্য কাজ হল ডিম ও মহিলাদের সেক্স হরমোন তৈরি করা। পুরুষদের ক্ষেত্রে, এর সমতুল্য প্রজনন অঙ্গ হল টেসটিস বা অণ্ডকোষ যা পুরুষের শরীরে স্পার্ম বা শুক্রাণু ও পুরুষদের সেক্স হরমোন তৈরি করে।
- ডিম্বাশয়ের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক উপায়ে উন্নত করা যায়?
কিছু নির্দিষ্ট জীবনশৈলি সংক্রান্ত পরিবর্তন সামগ্রিক প্রজনন সংক্রান্ত স্বাস্থ্যের উপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বৈকি, তবে এক্ষেত্রে একথাটি মনে রাখা দরকার যে প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে শারীরিক পরিস্থিতি বা অবস্থা আলাদা আলাদা হয়। স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখা, পুষ্টিকর পদার্থে পূর্ণ সুষম ডায়েট খাওয়া, মানসিক স্ট্রেস লেভেলকে কম করা, নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন করা ও ধূমপান পরিহার করার মতো বিষয়গুলি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়ের স্বাস্থ্যের উপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আপনার যদি গর্ভধারণ করতে কোনও সমস্যা হয় বা ডিম্বাশয়ের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আপনার মনে কোনও উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা তৈরি হয়, তাহলে আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী কাস্টমাইজ করা নির্দেশিকা ও চিকিৎসা বিকল্পের সাজেশন পেতে একটি অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য পরিষেবা পেশাদার ব্যক্তির সাথে আলোচনা করাটা অবশ্যই প্রয়োজন।
এটি ভুলে গেলে চলবে না যে আপনার ফার্টিলিটি প্রয়াস চলাকালীন সময়ে কোনও অবহিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য আপনাকে নিজের শরীরের প্রজননতন্ত্রকে ভালো করে বুঝে নিতে হবে। ডিম্বাশয় বা ফার্টিলিটি-সম্পর্কিত কোনও বিষয়ে আপনার যদি আরও কোনও প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমাদের ফার্টিলিটি স্পেশালিস্টের অভিজ্ঞ টিমের সাথে যোগাযোগ করতে একদম দ্বিধা করবেন না। আপনার প্রয়াসের প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাকে সহায়তা করার ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর।