আইইউআই- সন্তানলাভের সহজ ও প্রাথমিক ধাপ (IUI meaning in Bengali)
- Published on February 03, 2023

আধুনিক জীবনযাত্রায় সন্তানলাভে অক্ষমতা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়াশোনা শেষে চাকরি, বিয়ে আর কেরিয়ার গোছাতে গোছাতে তিরিশটা বসন্ত পেরিয়ে যায় কোথা দিয়ে। তারপরে যখন একটু থিতু হয়ে ভালবাসার বাসায় খুদে সদস্যকে আনার কথা ভাবছে দম্পতি, ততক্ষণে পথে দেরি হয়ে যায় অনেক সময়। বয়সজনিত কারণে জননতন্ত্রে নানা সমস্যা বাসা বাধে। মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা, খাদ্যাভ্যাস, রাত জাগা, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি বিষয়গুলি যে সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। কোনও দম্পতি যদি এক বছর চেষ্টা করার পরও সন্তানধারণ না করতে পারে, সেক্ষেত্রে তারা সন্তানলাভে অক্ষম বলে ধরে নেওয়া হয়। মুশকিল হল, সন্তানধারণে অক্ষমতাকে অনেকেই নিজস্ব ব্যক্তিগত সমস্যা ভেবে হীনমন্যতায় ভোগেন এবং চেপে যান। কিন্তু এই ভাবনা থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ, সন্তানহীনতার সমস্যা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা কারও একার নয়। ভারতের মতো জনবিস্ফোরণের দেশেও প্রায় ১২ শতাংশ দম্পতি সন্তানহীনতার সমস্যায় ভুগছে। আশার কথা হল, প্রাকৃতিক বা জৈবিক উপায়ে যারা সন্তানধারণ করতে পারছেন না, তাঁদের জন্য আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অ্যাসিস্টেড কনসেপশন বা সহায়ক গর্ভাধান পদ্ধতির বিকল্প বন্দোবস্ত রয়েছে। আর এই পদ্ধতির সবচেয়ে সহজ ও প্রাথমিক ধাপ হল আইইউআই বা ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন।
Table of Contents
আইইউআই কী? (What is IUI in Bengali)
এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে পুরুষের বীর্য থেকে গুণগত মানসম্পন্ন শুক্রাণু ল্যাবরেটরিতে বাছাই করে (স্পার্ম ওয়াশিং) স্ত্রীর গর্ভাশয়ে সরাসরি প্রবেশ করানো হয়, যাতে পরিভ্রমণ পথ সংক্ষিপ্ত হয়ে সুস্থ-সবল শুক্রাণু সহজে ডিম্বাণুর কাছাকাছি আসে এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে। এই পদ্ধতির সুবিধা হল, এতে ঝামেলা কম, জটিলতা কম, সময় কম, এমনকী খরচও কম।
আইইউআই পদ্ধতি কখন ও কেন? (IUI Procedure in Bengali)
১) যে সব দম্পতির সন্তানহীনতার কারণ অজানা অর্থাৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও অনুর্বরতার সঠিক কারণ জানা যায়নি তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির সাহায্য নিলে সুফল মিলতে পারে।
২) যে সব মহিলাদের এন্ডোমেট্রিয়াসিসের অল্প সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এই প্রক্রিয়া কার্যকরী।
৩) পুরুষসঙ্গীর শুক্রাণুর গুণগত মানে সমস্যা থাকলেও এই পদ্ধতির সাহায্যে সুফল পাওয়া যায়। অনেক সময়ই পুরুষের শুক্রাণুর ঘনত্ব (কনসেনট্রেশন), সচলক্ষমতা (মবিলিটি) বা আকার-আয়তনে (মরফোলজি) সমস্যা থাকতে পারে। আইইউআই পদ্ধতিতে উন্নতমানের শুক্রাণু আলাদা করে গর্ভাশয়ে প্রবেশ করানো হয় বলে নিম্নমানের শুক্রাণু বা অন্যান্য উপাদান মিলনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না।
৪) পুরুষসঙ্গী সহবাসে অক্ষম হলে বা ঠিকমতো বীর্যক্ষরণ না হলে এই উপায় কার্যকরী।
৫) অন্য দাতার থেকে শুক্রাণু ( ডোনার স্পার্ম) নিয়ে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে আইইউআই হল প্রাথমিক ও কার্যকরী ধাপ।
৬) যেসব মহিলাদের ঋতুস্রাব অনিয়মিত, ডিম্বাশয় থেকে প্রতি মাসে ডিম্বাণু আসে না বা জরায়মুখ সঙ্কুচিত, তাদের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি কার্যকরী।
৭) জরায়ুর মিউকাস খুব ঘন হলে অনেকসময় শুক্রাণুকে ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছতে দেয় না। আবার জরায়ুর অবস্থানজনিত কারণেও অনেকসময় শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন হয় না। আইইউআই পদ্ধতিতে জরায়ুকে বাইপাস করে সরাসরি গর্ভাশয়ে শুক্রাণু পৌঁছে দেওয়ায় এই সমস্যা এড়ানো যায়।
৮) প্রায় বিরল হলেও আর একটি ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে উপকার মেলে। সেটি হল, অনেক মহিলার বীর্যরসের (সিমেন) প্রোটিনে অ্যালার্জি থাকে। কন্ডোমের সাহায্যে সেক্ষেত্রে সহবাস সম্ভব হলেও গর্ভধারণ অসম্ভব। আইইউআই-এ শুক্রাণু বাছাই পদ্ধতির সময় যেহেতু বীর্যরসের প্রোটিন ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় উপাদান অনেকটাই আলাদা করে দেওয়া সম্ভব হয়, সেহেতু এই সমস্যা এড়ানো যায়।
আইইউআই-এর প্রস্তুতি (Preparations for IUI in Bengali)
অ্যাসিস্টেড কনসেপশন বা সহায়ক গর্ভাধানের যে কোনও পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি জরুরি হল শরীর ও মনের প্রস্তুতি। ইতিবাচক মনোভাব এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। মানসিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে না পারলে এই পদ্ধতির সুফল মেলে না। মানসিক উৎকণ্ঠা বা দুশ্চিন্তায় থাকলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। প্রজননক্ষমতায় যা অন্যতম বড় বাধা। আর একটা বিষয় হল, শারীরিক ভাবেও নিজেকে তৈরি করতে হবে। নিয়মিত হাঁটাচলা, যোগব্যায়াম করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। মদ্যপান বা ধূমপান করা চলবে না। রাত জাগলে শরীরে ধকল আসে। তাই ঠিক সময়ে ঘুমিয়ে পড়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম একান্ত জরুরি। শুরুতে
গর্ভধারণে আবশ্যিক কিছু শারীরিক পরীক্ষা করাবেন চিকিৎসক। সেক্ষেত্রে কোনও সমস্যা ধরা পড়লে তার আলাদা চিকিৎসা করাতে হবে। হরমোনের ভারসাম্যে হেরফের থাকলে সেটি ওষুধ দিয়ে ঠিক করা হয়। মোট কথা সুস্থ ও সবল শুক্রাণু, ডিম্বাণু যোগানের সবরকম ব্যবস্থা করতে হবে।
ডিম্বাণুর ক্ষেত্রে ডিম ফোটার সময় নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি। বাড়িতেই ওভালুয়েশন প্রেডিক্টর কিটের সাহায্যে এই সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। অনেক সময় ফলিকিউলার স্টাডির জন্য ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ডের সাহায্য নেন চিকিৎসকেরা। প্রয়োজনে এইচসিজি ইনজেকশন বা কিছু ওষুধও দেওয়া হতে পারে ভাল ডিম্বাণু তৈরি করার জন্য। ডিম ফোটার পরে-পরেই আইইউআই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
অন্যদিকে, পুরুষসঙ্গীর বীর্য থেকে উন্নত গুণমানের শুক্রাণু আলাদা করে নেওয়া হয় ল্যাবরেটরিতে বিশেষ এক প্রক্রিয়ায় (স্পার্ম ওয়াশিং)। স্পার্ম ব্যাঙ্ক থেকে শুক্রাণু নিলে তা এই পদ্ধতির জন্য তৈরি (ওয়াশড) হয়েই আসে।
আইইউআই প্রক্রিয়া (IUI Process in Bengali)
ক্লিনিকে পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য খুব বেশি হলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। আর শুধুমাত্র আইইউআই-এর জন্য লাগে দু’ থেকে পাঁচ মিনিট। এর জন্য কোনও অ্যানাস্থেশিয়া করতে হয় না এবং এই প্রক্রিয়া যন্ত্রণাদায়ক নয়। উন্নতমানের শুক্রাণু ক্যাথিটারের মাধ্যমে যোনিপথ
দিয়ে গর্ভাশয়ে প্রবেশ করানো হয় ইনজেকশনের সাহায্যে। কিছুক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম নিয়ে গ্রহীতা বাড়ি চলে যেতে পারেন। একদম স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যাপন করা যাবে এরপর। তবে, অবশ্যই সাবধানে থাকতে হবে। এক-দু’দিন হালকা স্পটিং হলে চিন্তা করার কিছু নেই।
আইইউআই-তে ঝুঁকি (Risks for IUI in Bengali)
তুলনায় সহজ ও নিরাপদ হলেও এই প্রক্রিয়াতেও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, ইনফেকশন হওয়ার সামান্য একটা ঝুঁকি থাকে। ক্যাথিটার ঢোকানোর সময কোনও কারণে ক্ষত তৈরি হলে খুব সামান্য রক্তপাত হতে পারে। যদিও গর্ভধারণে এর কোনও প্রভাব পড়ে না। আর অনেকসময় যমজ বা তিনটি সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা থাকে। তবে এই প্রক্রিয়ার জন্য সেটা হয় না। ডিম ফোটার জন্য যে হরমোনাল ওষুধ প্রয়োগ করা হয় মহিলাদের শরীরে, তার জন্যই হয়। কারও কারও তলপেটে সামান্য ব্যথা হলে চিন্তা করার দরকার নেই। তবে, রক্তপাত বা ব্যথা বা অন্য যে কোনও সমস্যায় অস্বাভাবিকত্ব দেখা দিলে অতি অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আইইউআই সফলতার হার (IUI Success Rate in Bengali)
সাধারণত দু’সপ্তাহ পরে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে দেখে নেওয়া হয় গর্ভধারণ সফল হল কিনা। খেয়াল রাখতে হবে, বাড়িতে প্রেগন্যান্সি কিটে অনেকসময় ভুল ফলাফল আসতে পারে। যেমন গর্ভধারণ সফল হলেও শুরুর দিকে শরীরে প্রেগন্যান্সি হরমোন যথাযথ মাত্রায় তৈরি না হওয়ায় অনেকসময় ‘ফলস-নেগেটিভ’ রিপোর্ট আসে। আবার যারা এইচসিজি হরমোনের ওষুধ নিয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে গর্ভবতী না হওয়া সত্ত্বেও শরীরে এই হরমোনের উপস্থিতির জন্য ‘ফলস-পজিটিভ’ রেজাল্ট আসে অনেকসময়। তাই রক্ত পরীক্ষা করে এই ব্যাপারে সুনিশ্চিত হয়ে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেন চিকিৎসকেরা।
‘পজিটিভ’ হলে মাতৃত্বের যাত্রা শুরু। এ এক নতুন পথ, আশার পথ, আলোর পথ। কিন্তু ‘নেগেটিভ’ হলেও চিন্তার কিছু নেই। মহিলাদের আইইউআই করার ক্ষেত্রে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা ১০-১৫ ভাগ। প্রতিবার এই সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। সাধারণত তিন থেকে চার বার আইইউআই করার পর সাফল্যের হার ৪০-৫০ ভাগ হয়ে যায়। এই জন্য একবার সফল না হলে আরও চার-পাঁচ বার এই পদ্ধতিতে চেষ্টা করা উচিত। এরপরেও এই প্রক্রিয়ায় সাফল্য না এলে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে আইভিএফ, আইসিএসআই ইত্যাদির সাহায্য নেওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, লক্ষ্য এক হলেও উপায় অনেক। বিশ্বাস আর ইতিবাচক মনোভাব থাকলে জীবনপথের বড় বড় বাধা-বিঘ্ন হাসিমুখে পার করা সম্ভব।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নমালা:
১) আইইউআই কতটা নিরাপদ?
আইইউআই তুলনায় সহজ এবং নিরাপদ পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় গর্ভধারণে জটিল কোনও সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে, অনেকসময় ইনফেকশন হওয়ার সামান্য সম্ভাবনা থেকে যায়।
২) আইইউআই কখন সফল হয় না?
বয়স, কত দিন ধরে সন্তানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে, পুরুষসঙ্গীর বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান ইত্যাদি বেশ কিছু বিষযের উপরে সফলতার হার নির্ভর করে। তাছাড়া চিকিৎসকের দক্ষতা, ল্যাব টেকনিশিয়ানের অভিজ্ঞতা, ক্লিনিকের ল্যাবরেটরির মানের উপরেও এই পদ্ধতি কতটা সফল হবে সেটা নির্ভর করে।
৩) প্রথমবার আইইউআই-তে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কতটা?
মোটামুটি ভাবে ৩৫ বছরের কমবয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রথমবার আইইউআই পদ্ধতিতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা ১০ থেকে ২০ শতাংশ। বয়স বাড়লে সম্ভাবনার হার কমবে। চল্লিশের বেশি বয়স হলে আইইউআই পদ্ধতিতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে ২ থেকে ৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। তবে এরপর আরও কয়েকবার এই পদ্ধতিতে চেষ্টা করলে সম্ভাবনা বাড়ে। তৃতীয় বা চতুর্থ বারে গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি হয়।
৪) কী খাবার খেলে আইইউআই পদ্ধতিতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়বে?
সবুজ শাকসব্জিতে ফোলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে বলে এই সময় খাওয়া দরকার। সূর্যমুখীর বীজে (সানফ্লাওয়ার সিড) ভিটামিন ই, ফোলেট, সেলেনিয়াম আর ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এছাড়াও ডাল, বিনস, আখরোট, ডিমের কুসুম, দারচিনি ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখলে সুফল মেলে।
Related Posts
Written by:
Dr Swati Mishra
Consultant
Dr Swati Mishra is an internationally trained obstetrician-gynecologist and reproductive medicine specialist. She has trained and worked at some of the most reputed medical institutions in India and abroad. She has worked as a visiting consultant at multiple reputed reproductive medicine centers across Kolkata and as a chief consultant in ARC Fertility Center, Kolkata. Her unique skills and diverse work experience in India and the USA have made her a respected name in the field of IVF. She is also a trained specialist in all types of laparoscopic, hysteroscopic and operative procedures related to fertility treatment
Over 18 years of experience
Kolkata, West Bengal
Our Services
Fertility Treatments
Problems with fertility are both emotionally and medically challenging. At Birla Fertility & IVF, we focus on providing you with supportive, personalized care at every step of your journey towards becoming a parent.Male Infertility
Male factor infertility accounts for almost 40%-50% of all infertility cases. Decreased sperm function can be the result of genetic, lifestyle, medical or environmental factors. Fortunately, most causes of male factor infertility can be easily diagnosed and treated.We offer a comprehensive range of sperm retrieval procedures and treatments for couples with male factor infertility or sexual dysfunction.