AMH পরীক্ষা কি (What is AMH Test in Bengali)

Author : Dr. Britika Prakash November 14 2024
Dr. Britika Prakash
Dr. Britika Prakash

MBBS, MD (Obstetrics & Gynecology), Fellowship in Reproductive Medicine (IVF)

6+Years of experience:
AMH পরীক্ষা কি (What is AMH Test in Bengali)

ডিম্বাশয়ে কত ডিম, জানুন এ.এম.এইচ টেস্টে

 

আমাদের এই দেহ আর তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজকর্ম খুবই জটিল। তার থেকেও জটিল হল জননতন্ত্র। ডিম্বাণু আর শুক্রাণুর মিলনে ভ্রূণের সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো অঙ্কের দুরূহ সমীকরণ। এই রকমই একটা জটিল সমীকরণের নাম হল অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোন, সংক্ষেপে এএমএইচ। মহিলাদের শরীরে ডিম্বাশয়ের ভিতরে ফলিকলের কোষ এএমএইচ হরমোন ক্ষরণ করে। রক্ত পরীক্ষা করে এএমএইচ হরমোনের মাত্রা নির্ধারণের মাধ্যমে মহিলার শরীরের ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা বা কত ডিম রয়েছে তা বোঝা যায়। এটি একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা। এর জন্য বিশেষ কোনও সময় বা প্রস্তুতির দরকার হয় না। সন্তানধারণে অক্ষমতার চিকিৎসায় এই পরীক্ষাটি একান্ত জরুরি ও প্রাথমিক ধাপ। 

 

নারীর বয়স, ডিমের সংখ্যা

 

নারীদেহে ডিমের সংখ্যা ও মান নির্ধারণকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’। প্রত্যেক নারীই নির্দিষ্ট সংখ্যার ডিম্বাণু নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। রজস্বলা হওয়ার পর প্রতি মাসে একটা-একটা করে ডিম ফোটে আর ঋতুস্রাবের সময় বেরিয়ে যায় শরীর থেকে। এই কারণে মহিলাদের বয়স যত বাড়ে, ততই শরীরে ডিমের সংখ্যা কমে আসে। এই ভাবে ডিম কমতে কমতে একসময় সন্তানধারণে অক্ষমতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আধুনিক জীবনযাত্রায় বয়সজনিত কারণে প্রজননে অক্ষমতার সমস্যা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পড়াশোনা শেষে চাকরি, বিয়ে আর কেরিয়ার গোছাতে গোছাতে মেয়েদের বয়স ৩০-৩৫ পেরিয়ে যাচ্ছে। ততদিনে শরীরে ডিমের সংখ্যা কমে গিয়েছে অনেক। এছাড়া ওভারিতে আগে কোনও সার্জারি হলে বা এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো সমস্যা থাকলে ওভারিয়ান রিজার্ভ কমে যেতে পারে। ক্যানসারের চিকিৎসা অর্থাৎ কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির জন্যও কমে যায় ডিমের সংখ্যা। মদ্যপান, ধূমপান বা অন্যান্য নেশা, স্থূলত্ব, জিনঘটিত কারণ (ফ্র্যাজাইল সিনড্রোম), পেলভিক ইনফেকশন, থাইরয়েড, মাম্পস-সহ বেশ কিছু অসুখে ডিমের সংখ্যা কমে যেতে পারে শরীরে।  আবার অনেকসময় ডিমের সংখ্যা কম থাকার কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

ঠিক যেমন ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’ কম থাকলে শরীরে তার কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্মণ দেখা যায় না, যেটা থেকে এই সমস্যা আছে কি না তা বোঝা যাবে। আপাত ভাবে বলা যায়, যাদের খুব দেরি করে ঋতুস্রাব হয় বা মাঝেমধ্যে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে, তাদের এই সমস্যা থাকতে পারে। আবার ২৮ দিনের আগেই যাদের ঋতুস্রাব হয়ে যায়, তাদেরও এই সমস্যা থাকতে পারে। অনেকের এই সমস্যা থাকলে ঋতুস্রাবের সময় খুব বেশি রক্তপাত হয়। আর এই সমস্যার সবচেয়ে বড় লক্ষ্মণ হল সন্তানধারণে অক্ষমতা এবং গর্ভপাত।

 

সন্তানলাভে অক্ষমতার চিকিৎসায় এএমএইচ

 

কোনও দম্পতি যদি এক বছর চেষ্টা করার পরও সন্তানধারণ না করতে পারে, সেক্ষেত্রে তাদের প্রজননতন্ত্রে সমস্যা আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। সন্তানধারণে অক্ষমতার সমস্যাকে অনেকেই ব্যক্তিগত বিষয় ভেবে হীনমন্যতায় ভোগেন। যেটা ঠিক নয়। কারণ, এই অক্ষমতা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভারতের মতো জনবিস্ফোরণের দেশেও প্রায় ১২ শতাংশ দম্পতি প্রজনন অক্ষমতার সমস্যায় ভুগছে। আশার কথা হল, প্রাকৃতিক বা জৈবিক উপায়ে যারা সন্তানধারণ করতে পারছেন না, তাঁদের জন্য আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অ্যাসিস্টেড কনসেপশন বা সহায়ক গর্ভাধান পদ্ধতির বিকল্প বন্দোবস্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে যত দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যায় ততই ভাল। বিশেষ করে ৩৫ বা তার উপরে বয়স হলে একেবারে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতি মাসে ঋতুস্রাবের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ডিমের সংখ্যা কমতে থাকে।

সন্তানলাভে অক্ষমতার চিকিৎসায় শুরুতেই মহিলা ও পুরুষসঙ্গীকে কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। পুরুষদের বীর্যরসে শুক্রাণুর ঘনত্ব ও গুণমান যাচাইয়ের পাশাপাশি মহিলাদের ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ টেস্ট’ করে ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণমাণ দেখে নেন চিকিৎসকেরা। ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ টেস্টে’র জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে অ্যান্ট্রাল ফলিকিউল কাউন্ট, রক্তে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (এফএসএইচ) ও অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোনের (এএমএইচ) মাত্রা নির্ণয় অন্যতম।

 

এএমএইচ পরীক্ষা কেন ও কখন

 

মহিলাদের ডিম্বাশয়ে ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা জানার জন্য এএমএইচ পরীক্ষা করা হয়। বেশি এএমএইচ থাকার অর্থ, ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’ ভাল বা যথেষ্ট সংখ্যায় ডিম রয়েছে শরীরে। আর এএমএইচ-এর লেভেল কম হলে পর্যাপ্ত সংখ্যায় ডিম নেই বলে ধরে নেওয়া হয়। কত দিন ধরে শরীরে ডিম উৎপাদন হবে বা সন্তানধারণের জন্য হাতে কতটা সময় আছে সেটাও এই পরীক্ষা থেকে বলা যায়। ইন-ভিট্রো-ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ-এর সময় ডিমের সংখ্যা বাড়াতে যে ওষুধ দেওয়া হয়, তাতে কতটা কাজ দিচ্ছে বা দেবে তা-ও আন্দাজ করা যায় এএমএইচ পরীক্ষা থেকে। তাই সহায়ক গর্ভাধান বা অ্যাসিস্টেড কনসেপশনের একেবারে প্রাথমিক ধাপ হল এএমএইচ পরীক্ষা। এছাড়া, সময়ের আগে মোনোপজ হবে কি না তা বলা যায় এএমএইচ টেস্টের ফলাফল থেকে। পিসিওএস বা ওভারিয়ান ক্যানসারের মতো রোগ নির্ণয়ে এই পরীক্ষা করা হয়।

 

এএমএইচ পরীক্ষা পদ্ধতি

 

সাধারণ রক্ত পরীক্ষা করেই এএমএইচ নির্ধারণ করা যায়। ঋতুচক্রের যে কোনও সময়ে এই পরীক্ষা করা যায়। কারণ, অন্যান্য প্রজনন হরমোনের মতো এএমএইচ-এর মাত্রার বিশেষ হেরফের হয় না সময়ভেদে। স্বাভাবিক ভাবেই এই রক্ত পরীক্ষা করার জন্য বিশেষ কোনও শারীরিক প্রস্তুতিরও দরকার হয় না। 

   

এএমএইচ-মাত্রা

 

মহিলাদের শরীরে অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোন বা এএমএইচ-এর মাত্রা অনেকটাই নির্ভর করে বয়সের উপরে। বয়ঃসন্ধি কালে রক্তে এএমএইচ-এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ২৫ বছর বয়সে গিয়ে এই হরমোন চূড়ান্ত মাত্রায় উপস্থিত থাকে মহিলাদের শরীরে। এরপর ধীরে ধীরে এই হরমোনের মাত্রা কমতে থাকে। ন্যানোগ্রাম প্রতি মিলিলিটারে এএমএইচ-এর পরিমাপ করা হয়। সাধারণ ভাবে বলা যায়, ২৫ বছর বয়সে একজন মহিলার রক্তে কম করে ৩ ন্যানোগ্রাম প্রতি মিলিলিটার এএমএইচ হরমোন থাকার কথা। ৩০-এ গিয়ে সেটা কমে হয় ২.৫, ৩৫-এ ২, ৪০-এ ১ থেকে ১.৫ এবং ৪৫ বা তার বেশি বয়সে ০.৫ কিংবা আরও কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২ ন্যানোগ্রাম প্রতি মিলিলিটার বা তার বেশি এএমএইচ থাকলে সন্তানধারণে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ২ থেকে ১ এর মধ্যে থাকলে সেটাকে ‘অ্যাভারেজ’ বা সম্ভাবনার দিক থেকে মধ্যম মানের ধরা হয়। আর ১ এর নীচে চলে গেলে সেক্ষেত্রে দাতার কাছ থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করে আইভিএফের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এক্ষেত্রে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, ল্যাবরেটরি ও তার মান বিশেষে ফলাফল কমবেশি হতে পারে। আর এএমএইচ খুব বেশি থাকাটাও সবসময় ভাল লক্ষ্মণ না। কারণ, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে (পিসিওএস) ভুগলে অনেক সময় এএমএইচ বেশি আসে। 

সবশেষে বলা যায়, এএমএইচ কম হলে হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। কারণ এএমএইচ দিয়ে শুধুমাত্র ডিমের সংখ্যা বা উৎপাদন ক্ষমতা জানতে পারি আমরা। একথা মনে রাখতে হবে, সন্তানধারণের জন্য শ’ বা হাজার নয়, একটা ভাল ডিমই যথেষ্ট। সমীক্ষা বলছে, ওভারিয়ান রিজার্ভ কম রয়েছে এমন মহিলাদের ৩৩ শতাংশ নিজের ডিমে সন্তানধারণে সক্ষম হন। তবে, যত তাড়াতাড়ি সমস্যা ও তার কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু হবে, তত ভাল ফল পাওয়া যাবে।

 

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নমালা:

 

১) এএমএইচ টেস্টে কি ডিমের গুণগত মান জানা যায়?

এএমএইচ মাত্রার সাহায্যে একজন মহিলার শরীরে কত ডিম উৎপাদন হতে পারে, তা জানতে পারেন চিকিৎসকেরা। যত বেশি সংখ্যায় ডিম থাকবে, সন্তানধারণের সম্ভাবনা তত বেশি। কিন্তু ডিমের গুণগত মান কেমন, তা জানার বিশেষ কোনও উপায় এখনও নেই। এটুকু খালি বলা যেতে পারে, বয়স কম হলে ডিমের গুণগত মান ভাল থাকে।

  

২) সন্তানধারণের জন্য এএমএইচ মাত্রা কত থাকা দরকার?

সন্তানধারণে সক্ষম মহিলাদের দেহে এএমএইচ-এর মাত্রা মোটামুটি ভাবে ১.০ থেকে ৪.০ ন্যানোগ্রাম প্রতি মিলিলিটারের মধ্যে থাকে। এএমএইচ ১ এর কম হলে ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’ প্রয়োজনের তুলনায় খারাপ বা কম বলে ধরা হয় এবং সেক্ষেত্রে দাতার কাছ থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করে আইভিএফ করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।  

 

 ৩) এএমএইচ কী ভাবে বাড়ানো যাবে?

এএমএইচ-এর মাত্রা মহিলাদের শরীরের একেবারেই আভ্যন্তরীণ একটি বিষয়। তাই বাইরের কোনও উপাদান বা উপায় দিয়ে কী ভাবে এটা বাড়ানো যাবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা অন্য কোনও শারীরিক সমস্যার জন্য এএমএইচ কম হলে সেই সমস্যার চিকিৎসা করা যায়। এছাড়া, উদ্বেগহীন থাকা বা স্ট্রেস কমানো, স্বাস্থ্যকর খাবার, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, যোগাভ্যাসের মতো সুস্থ জীবনযাত্রার অভ্যাস সবসময়েই ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মান ভাল করতে সাহায্য করে। কিছু সাপ্লিমেন্ট (ডিএইচইএ, কোএনজাইম কিউ টেন, মেলাটোনিন, ভিটামিন ডি) নিলে শরীরে এএমএইচ-এর মাত্রা বাড়তে পারে বলে মত রয়েছে। তবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত নয়। কারণ এগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হিতে বিপরীত হতে পারে। আর আদপে এই সাপ্লিমেন্টগুলি কতটা কাজ দেয়, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে এবং এই নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

 

৪) কী খাবার খেলে এএমএইচ বাড়বে?

খাবারের সঙ্গে সরাসরি এএমএইচ-এর কোনও যোগ নেই। তবে ভিটামিন বি ৯ বা ফোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সবুজ শাকপাতা, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যুক্ত ফল, রসুন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পরিপূর্ণ আমন্ড, আখরোট, কুমড়োর বীজ, ডিম ইত্যাদি খাবার ডিম্বাণুর মান ভাল করে প্রজননে সাহায্য করে।

 

Our Fertility Specialists

Related Blogs