ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে সতর্ক থাকুন সিসিল পলিপ থেকে
- Published on March 23, 2023

কয়েক মাস আগে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ফুটবলের মহাতারকা পেলে। শুধু পেলে নন, বিশ্ব জুড়েই অন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ওয়ার্ল্ড ক্যানসার রিসার্চ ফান্ড ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২০ সালে বিশ্বের ১.৯ মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। এই কোলন ক্যানসারের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ হয় সিসিল পলিপ থেকে। গুপ্তঘাতকের মতো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে (যার ভিতর ফাঁপা) গজিয়ে ওঠা এই পলিপ সহজে চোখে পড়ে না এবং অপসারণ করতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। তবু শুরুতেই এই পলিপের উপস্থিতি ধরে ফেললে এবং তার চিকিৎসা করলে ক্যানসারের ঝুঁকি এড়ানো যায়।
Table of Contents
সিসিল পলিপ কী
পলিপ হল শরীরের কোনও অঙ্গের ভিতরে শ্লেষ্মা ঝিল্লি থেকে গজিয়ে ওঠা টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যার গায়ে মিউকাস মেমব্রেন ও অসংখ্য রক্তনালী থাকে। পলিপ ব্যাঙের ছাতার মতো বৃন্ত দিয়ে সংযুক্ত থাকলে তাকে বলে পেডাঙ্কল, আর বৃন্ত ছাড়া ছোট ছোট ডোমের আকারে টিস্যু লাইনিংয়ের সমান্তরালে গজিয়ে উঠলে তাকে বলে সিসিলি। শরীরের যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি বটুয়ার মতো অর্থাৎ ভিতরে কিছুটা খালি জায়গা থাকে সেখানেই পলিপ হতে পারে। মূত্রথলি, পাকস্থলী, নাক, পিত্তথলি, সারভিক্সের গায়ে পলিপ দেখতে পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বেশি এর উপস্থিতি চোখে পড়ে কোলন বা মলাশয়ে। প্রকৃতিতে বিনাইন হলেও পরবর্তীকালে পলিপ থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে নিরীহ বিবর্ণ শরীরে নেতিয়ে পড়ে থাকা সিসিল পলিপ থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সিসিল পলিপের প্রকারভেদ
চার প্রকারের সিসিল পলিপ দেখতে পাওয়া যায় –হাইপারপ্লাস্টিক, সিসিল সেরাটেড, টিউবিউলার ও টিউবিউলোভিলাস। এদের মধ্যে সিসিল সেরাটেড পলিপ থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। মোটামুটি ভাবে কোলন ক্যানসারের ২৫ শতাংশ হয় এই পলিপ থেকে। মাইক্রোস্কোপের তলায় করাত দাঁতের মতো দেখতে লাগে বিবর্ণ এই পলিপ। সমস্যা হল এই প্রকার পলিপ এমনভাবে অঙ্গের মধ্যে লুকিয়ে বেড়ে ওঠে যে সহজে চোখে পড়ে না আর এগুলোকে বাদ দিতেও খুব সমস্যা হয়।
সিসিল পলিপ কাদের হয়?
শরীরের মধ্যে সিসিল পলিপ কেন গড়ে ওঠে তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে এবং এই নিয়ে নানা রকমের মতবাদ রয়েছে। তবে সিসিল সেরাটেড পলিপ মোটামুটি ভাবে ৫০ বছরের বেশি পুরুষদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। আইবিডি অর্থাৎ ‘ইনফ্লেমেটরি বাওল ডিসিজ’ রয়েছে যাদের, তাদের এই পলিপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মোটাদের পলিপ হওয়ার রিস্ক বেশি থাকে এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কম খেয়ে যারা রেড মিট বেশি খায় তাদের এই সমস্যা হওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। যারা বেশি ধূমপান করে বা তামাক সেবন করে তাদের মধ্যেও এই রোগের প্রভাব বেশি। টাটকা খাবারের পরিবর্তে ক্যানড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া আর অতিরিক্ত মানসিক চাপ অল্প বয়সে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই সবের উপরে জিনগত ফ্যাক্টরও কাজ করে। পরিবারে কারও কোলনে পলিপ থাকলে বা কোলন ক্যানসার হলে অন্যদের ঝুঁকি রয়ে যায়। পরিবারে টাইপ টু ডায়াবেটিস যাদের রয়েছে, তাদেরও ঝুঁকি থাকে।
সিসিল পলিপের উপসর্গ
অধিকাংশ সময় শরীরের মধ্যে যে সিসিল পলিপ রয়েছে তা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। চিকিৎসক পরীক্ষা করে বা কোলনোস্কপি করলে টের পাওয়া যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে খামচে ধরার মতো পেটে ব্যাথা, ক্রনিক গ্যাসের সমস্যা, খিদে কমে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়। মলাশয় (কোলন) বা পায়ুদ্বারে (রেক্টাম) পলিপ হলে রোগীর অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার উপসর্গ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে যেটা হয়, সেটা হল এই পলিপের গায়ে যে রক্তনালী থাকে, সেগুলি ফেটে গিয়ে রক্ত পড়ে এবং শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। মলের সঙ্গে তাজা রক্ত বেরোলে অনেকেই সেটাকে পাইসল বলে ভুল করেন। কিন্তু নিজে কিছু আন্দাজ না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। মাঝবয়সের পর মলত্যাগের অভ্যাস বদলে গেলেই সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে যদি পর্যায়ক্রমে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হয়, সঙ্গে রক্তপাত, তাহলে অতি অবশ্য সতর্ক হতে হবে।
সিসিল পলিপ নির্ণয়
একদম প্রথমে মল পরীক্ষা করে (এফআইটি এবং মাল্টিটার্গেটেড স্টুল ডিএনএ টেস্ট) দেখা হয় তাতে রক্ত বা ক্যানসারের দশার কোনও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে কি না। এরপর কোলনে পলিপ রয়েছে কি না জানার জন্য যে পরীক্ষাটি করা হয়, তার নাম কোলনোস্কোপি। কোলনোস্কোপ হল একটি টিউব আকারের যন্ত্র যার সামনে ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। মলদ্বার দিয়ে টিউবটি ভিতরে প্রবেশ করিয়ে পুরো বৃহদন্ত্র ও ক্ষুদ্রান্তের কিছুটা অংশের ছবি পাওয়া যায়। এখন সিসিল পলিপ যত সমতল বিশিষ্ট হয়, ততই তাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। চিকিৎসকরা সিসিল পলিপ খুঁজে পেলে অনেক সময় তৎক্ষণাৎ তা বাদ করে দিতে পারেন অথবা পলিপ থেকে কিছুটা টিস্যু নিয়ে পরীক্ষাগারে পাঠাতে পারেন এটা দেখার জন্য যে ভবিষ্যতে তা থেকে ক্যানসারের সম্ভাবনা কতটা। এছাড়া সিটি কোলনোগ্রাফি বা ফ্লেক্সিবল সিগময়ডোস্কোপির সাহায্যে মলদ্বার ও মলাশয়ের ছবি পাওয়া যায়।
সিসিল পলিপের চিকিৎসা
শরীরে সিসিল পলিপ হলেই যে তা বাদ দিতে হবে এমন কোনও কথা নেই। ক্ষতিকারক না হলে পলিপ যেমন রয়েছে, তেমন রেখে দেওয়া যায়। তবে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। কারণ এই সিসিল পলিপ থেকে পরবর্তীকালে ক্যানসার হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। পলিপের আকার দেখে তা ক্যানসারাস না নিরীহ সেই সম্পর্কে একটা আন্দাজ করা যায়। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট পলিপ হলে তা থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কম। ৬-৯ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের পলিপগুলি থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা ৭-১২ শতাংশ। আর ১০ মিলিমিটারের বেশি ব্যাসার্ধের পলিপ হলে তাকে বড় আকারের বলা যাবে। এই ধরনের পলিপ থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা ২০-৩০ শতাংশ। পলিপ ক্যানসারাস হলে চিকিৎসক তা শরীর থেকে বাদ দিতে বলবেন। কোলনোস্কোপি করার সময়েই অনেক সময় এই অপসারণের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। একে বলে পলিপেক্টোমি। কিন্তু ক্যানসার যদি পলিপ থেকে শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে ততদিনে, তাহলে রেডিয়েশন এবং কেমোথেরাপি করতে বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, নিজের শরীরের ভালমন্দ নিজেকে বুঝতে হবে এবং শরীরকে অবহেলা করা চলবে না। পেটে কোনও রকম অস্বস্তি বা ব্যথা, মলত্যাগের ধরনে হঠাৎ পরিবর্তন, রক্তপাত ইত্যাদি বিষয়গুলিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে এবং নিজে বুদ্ধি না খাটিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ শুরুতেই সিসিল পলিপের উপস্থিতি ধরা পড়লে এবং প্রয়োজন বুঝে তা বাদ দিয়ে দিলে পরবর্তীকালে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নমালা
১) কোলন ক্যানসার আটকাতে কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত?
রোজকার খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাটকা ফলমূল, শাকসব্জি থাকতে হবে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে। ভূষি-সহ আটার রুটি, ওটস, মিলেট ইত্যাদি খেলে ভাল। গবেষণায় জানা গিয়েছে, শস্য দানা ও পর্যাপ্ত ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে অসুখ আটকে দেওয়ার পাশাপাশি কোলোরেক্টাল ক্যানসারের রোগীদের বাঁচার মেয়াদও অনেক বেড়ে যায়। কাজু, পেস্তা, কাঠাবাদাম হোক বা আখরোট, যে কোনও ধরনের বাদাম কোলন ক্যানসার দূরে রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ঝলসানো মাংস, রেড মিট বেশি খেলে ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া, ক্যানসার কোষের বাড়বাড়ন্ত থামিয়ে দিতে পারে হলুদের অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। হলুদের কারকুমিন কোলনের প্রিক্যানসারাস পলিপ দূর করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা দিয়েছে যে নিয়মিত হলুদ খেলে প্রিক্যানসারাস পলিপ কমে যায় বা তাদের বৃদ্ধি কমে যায়।
২) কোলনোস্কোপি কতদিন অন্তর করা উচিত?
৫০ বছরের পর পুরুষদের কোলনোস্কোপি করতে বলেন চিকিৎসকেরা। যদি কোলনোস্কোপিতে কোনও পলিপ বা অ্যাডেনোমা ধরা না পড়ে তাহলে আগামী ১০ বছর আর পরীক্ষা করার দরকার নেই। কিন্তু খুব ছোট পলিপ যদি ধরা পড়ে তাহলে হয়তে পাঁচ বছর পরে আবার একবার পরীক্ষা করতে বলা হয়। আর বড় আকারের পলিপ যদি ধরা পড়ে তাহলে একাধিক বার ফলোআপ কোলনোস্কোপি করার দরকার হবে।
৩) সিসিল পলিপ থেকে ক্যানসার হতে কত সময় লাগে?
এটা সুনির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও পলিপ থেকে শরীরে ক্যানসার যদি হয় তাহলে প্রায় ১০ বছর লেগে যায়।
৪) স্ট্রেস থেকে কী কোলন পলিপ হতে পারে?
স্ট্রেস কোলন পলিপের বিকাশ তরাণ্বিত করে। আসলে স্ট্রেস থেকে আনুষঙ্গিক বেশ কিছু খারাপ অভ্যাস তৈরি হয়। মদ্যপান, ধূমপানের মতো অভ্যাস, প্রসেসড ফুড খাওয়া, শরীরচর্চা না করা, রাত জাগা ইত্যাদি যার মধ্যে অন্যতম। এগুলি প্রত্যেকটি ক্যানসারের মারণথাবার দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায় শরীরকে।
৫) পলিপ অপসারণের পর কী আবার ফিরে আসে?
কোলোরেক্টাল পলিপ সম্পূর্ণরূপে অপসারিত করা হলে তা ফিরে আসা খুব বিরল ঘটনা। তবে, এই ধরনের রোগীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের নতুন করে আবার পলিপ গজায়। তাই পলিপ অপসারণের তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আবার ফলো-আপ বা কোলনোস্কোপি করে নতুন কোনও পলিপ তৈরি হয়েছে কি না তা দেখে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
৬) পলিপ সার্জারি করতে কত সময় লাগে?
মোটামুটি ভাবে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা সময় লাগে এবং সেই দিনই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দু’তিন দিনের মধ্যে রোগী সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়।
Related Posts
Written by:
Dr Shikha Tandon
Our Services
Fertility Treatments
Problems with fertility are both emotionally and medically challenging. At Birla Fertility & IVF, we focus on providing you with supportive, personalized care at every step of your journey towards becoming a parent.Male Infertility
Male factor infertility accounts for almost 40%-50% of all infertility cases. Decreased sperm function can be the result of genetic, lifestyle, medical or environmental factors. Fortunately, most causes of male factor infertility can be easily diagnosed and treated.We offer a comprehensive range of sperm retrieval procedures and treatments for couples with male factor infertility or sexual dysfunction.