ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমের কারণ ও লক্ষ্মণ
- Published on August 29, 2023
একটা ক্রোমোজোমের পার্থক্যে কেউ নারী, কেউ পুরুষ। মানবদেহ এতটাই সূক্ষ্ম ও জটিল। মাতৃগর্ভে প্রাণের সঞ্চারের সময় ক্রোমোজোমের বিন্যাসে ঠিক হয়ে যায় সন্তান পুত্র না কন্যা হবে। পুরুষ মানে এক্স-ওয়াই ক্রোমোজোম আর নারীর ক্ষেত্রে তা এক্স-এক্স। কিন্তু কখনও জেনেটিক ত্রুটির কারণে এই এক্স, ওয়াই ক্রোমোজোমের বিন্যাসে গড়বড় হয়ে যেতে পারে। এমনই একটি দুর্ঘটনার পরিণাম হল ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম।
Table of Contents
ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম কাকে বলে
জেনেটিক ত্রুটির কারণে কোনও পুরুষের দেহে যদি অতিরিক্ত এক্স ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে, তখন তাকে বলে ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম। এক্ষেত্রে চিরাচরিত ৪৬টির বদলে ৪৭টি ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে- ৪৭, এক্সএক্সওয়াই। তাই এর আর এক নাম এক্সএক্সওয়াই সিনড্রোম। ক্রোমোজোমের বিন্যাসের এই অস্বাভাবিকত্ব জন্মগত। গর্ভাবস্থায় এটি নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ সময়েই আগে ধরা পড়ে না বা ছোটবেলায় বোঝাও যায় না। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় পৌরুষত্বের বিকাশ না হওয়া বা যৌন ইচ্ছার ঘাটতি, ছোট শিশ্ন, সন্তানধারণের অক্ষমতার মতো সমস্যাগুলির কারণ খুঁজতে গিয়ে সামনে আসে ক্রোমোজোমের এই অস্বাভাবিকত্ব। এমন নয় যে রোগটি বিরল। সমীক্ষা বলছে, প্রতি ১০০০ শিশুপুত্রের মধ্যে এক থেকে দুই জনের ক্রোমোজোম বিন্যাসে এই ত্রুটি থাকে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, জন্মগত এই দুর্ঘটনা এড়ানোর কোনও উপায় নেই। তবে, হরমোন প্রতিস্থাপনের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক আচরণগত থেরাপি করে এই রোগের উপসর্গ মোকাবিলা বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রসঙ্গত, ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম কোনও বংশগত রোগ নয়, জেনেটিক দুর্ঘটনা মাত্র। একটি সন্তানের এই উপসর্গ থাকলে পরবর্তী সন্তানের এই উপসর্গে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমের কারণ
ক্রোমোজোমের বিন্যাসে লিঙ্গ নির্ধারণের সূচনা হয় ভ্রূণের জন্মলগ্নে। সাধারণ ভাবে মা ও বাবা একটা একটা করে ‘সেক্স-ক্রোমোজোম’ ধারণ করেন। মায়ের ডিমে একটা এক্স ক্রোমোজোম থাকে। বাবার শুক্রাণুতে এক্স বা ওয়াই যে কোনও একটা ক্রোমোজোম থাকতে পারে। এক্স ক্রোমোজোমের শুক্রাণু দিয়ে ডিমটি নিষিক্ত হলে দু’টি এক্স ক্রোমোজোমে কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। আর ওয়াই ক্রোমোজোমের শুক্রাণু এক্স ক্রোমোজোমের ডিমকে নিষিক্ত করলে এক্স-ওয়াই ক্রোমোজোমে পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। বিভ্রাট বা দুর্ঘটনাবশত পুত্রসন্তানের এক্স-ওয়াই ক্রোমোজোমের সঙ্গে অতিরিক্ত একটা এক্স ক্রোমোজোম যুক্ত হলে ‘জেনেটিক কোডে’ যে ত্রুটি হয় তাকেই বলে ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম। বিভিন্ন কারণে এটা হতে পারে-
১) বাবার শুক্রাণু অতিরিক্ত এক্স ক্রোমোজোম বহন করতে পারে,
২) মায়ের ডিম অতিরিক্ত এক্স ক্রোমোজোম ধারণ করতে পারে,
৩) ভ্রূণ বিকাশের প্রাথমিক অবস্থায় কোষ বিভাজনে বিভ্রাট বা ত্রুটি হতে পারে।
এই অতিরিক্ত এক্স ক্রোমোজোমটি শরীরের সমস্ত কোষে বাহিত হতে পারে আবার শরীরের কিছু কোষে এই বিন্যাস উপস্থিত থাকতে পারে (মোজাইক ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম)। কোনও ক্ষেত্রে একটার বেশি অতিরিক্ত এক্স ক্রোমোজোম থাকতে পারে (৪৮এক্সএক্সওয়াইওয়াই, ৪৮এক্সএক্সএক্সওয়াই, ৪৯এক্সএক্সএক্সএক্সওয়াই)। যদিও সেগুলি অত্যন্ত বিরল ঘটনা।
ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমের লক্ষ্মণ
ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমের নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক ও মানসিক লক্ষ্মণ রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, এই লক্ষ্মণের বহিঃপ্রকাশ ব্যক্তিবিশেষে আলাদা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে লক্ষ্মণ এতটাই নগণ্য হয় যে বোঝাও যায় না। বিশেষ করে বুদ্ধিমত্তা বা সংশ্লিষ্ট মানসিক লক্ষ্মণগুলির পরিমাপ করা কঠিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বয়সকালে সন্তান উৎপাদনে অক্ষমতা বা যৌনজীবনে অনীহার কারণ খুঁজতে গিয়ে জেনেটিক ত্রুটিটি নজরে আসে।
শারীরিক লক্ষ্মণ
ছোটবেলায় যে শারীরিক লক্ষ্মণগুলি থেকে ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমের কথা বোঝা যেতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হল-
১) আকারে ছোট শিশ্ন,
>২) অণ্ডকোষ থলিতে অণ্ডকোষ না নামা,
৩) হার্নিয়া,
৪) দুর্বল পেশী।
একটু বড় হলে পর অর্থাৎ কিশোর অবস্থায় বেশ কিছু শারীরিক লক্ষ্মণ থেকে এই ত্রুটি বোঝা যায়। যেমন-
১) পরিবারের অন্য সদস্যদের গড় মাপের তুলনায় বেশি উচ্চতা, তুলনায় লম্বা পা, পেটের অংশ কম, সরু কাঁধ, চওড়া নিতম্ব,
২) আকারে ছোট শিশ্ন এবং অণ্ডকোষ,
৩) অণ্ডকোষ থলিতে অণ্ডকোষ না নামা,
৪) স্তনের আকার বৃদ্ধি,
৫) সমান্তরাল পায়ের পাতা বা ‘ফ্ল্যাট ফিট’,
৬) দুর্বল হাড় ও সেইজনিত সমস্যা।
পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে আরও কিছু লক্ষ্মণ ফুটে ওঠে, যা থেকে এই জেনেটিক ত্রুটির আন্দাজ স্পষ্ট ভাবে পাওয়া যেতে পারে-
১) যৌন ইচ্ছার ঘাটতি,
২) কম শুক্রাণু উৎপাদন,
৩) কম টেস্টোস্টেরণ ক্ষরণ,
৪) ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ শৈথিল্য,
৫) স্তনের আকার বৃদ্ধি,
৬) গোঁফ-দাড়ি কম, শরীরে লোমও তুলনায় কম,
৭) পেটে চর্বি,
৮) রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা,
৯) দুর্বল পেশী ও
১০) হাড়ের সমস্যা।
ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম যাদের থাকে, তাদের হাইপারটেনশন, টাইপ টু ডায়াবেটিস, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধি, থাইরয়েডের সমস্যার মতো বেশ কিছু রোগের উপসর্গ দেখা যায়। এছাড়াও, অটোইমিউন ডিজ়অর্ডার জনিত রোগ, অস্টিওপোরোসিস, স্তন ক্যানসারের মতো বেশ কিছু রোগের ঝুঁকি থাকে।
মানসিক লক্ষ্মণ
ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমে আক্রান্তদের অধিকাংশকেই কম-বেশি মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
১) এই সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের বসা, দাঁড়ানো, চলতে শেখা বা মুখে বুলি ফুটতে দেরি হতে পারে।
২) শৈশব থেকেই সামাজিক মেলামেশায় অস্বচ্ছন্দ বোধ করে এরা, যেটা পরে আরও বাড়ে।
৩) অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে। সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়।
৪) লিখতে পড়তে সমস্যা হয় অনেকের।
৫) এই সিনড্রোমে আক্রান্তদের অনেকের মধ্যে এডিএইচডি (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজ়অর্ডার) উপসর্গ দেখা যায়।
৬) বয়সকালে এই সিনড্রোমে আক্রান্তরা অনেকেই অবসাদ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তার মতো মানসিক সমস্যায় ভোগেন।
ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম নির্ণয়
ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম নির্ণয়ের জন্য ক্রোমোজোমের গঠন পর্যবেক্ষণ করতে হয়। ক্যারিওটাইপ নামে একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এটা করা যায়। পূর্ণবয়স্ক হোক বা শিশু, যে কোনও বয়সেই এই পরীক্ষা করা যায়। তবে, জন্মের আগে এই পরীক্ষা সাধারণত করা হয় না। গর্ভাবস্থায় কিছু পরীক্ষা করে জেনেটিক ত্রুটির বিষয়টি জানা যেতে পারে। যেমন, প্ল্যাসেন্টা (কোরোনিক ভিলাস স্যাম্পলিং) বা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড (অ্যামনিওসেনটেসিস) থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তার জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে ক্রোমোজোমের বিন্যাসে অস্বাভাবিকত্ব রয়েছে কি না জানা যায়। এছাড়া, হরমোনের অস্বাভাবিকত্ব নির্ণয়ে রক্ত ও মূত্রের পরীক্ষা করা যায়। এনআইপিটি (নন-ইনভেসিভ প্রিনাটাল টেস্টিং) করে দেখা যেতে পারে অতিরিক্ত ক্রোমোজোম রয়েছে কি না। যদিও এই পরীক্ষা কতটা কার্যকর তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমের চিকিৎসা
জিনগত এই ত্রুটি সারানো বা এর হাত থেকে পুরোপুরি ভাবে মুক্ত হওয়ার কোনও উপায় নেই। তবে এই রোগের উপসর্গ কম বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু চিকিৎসা রয়েছে।
১)হরমোন রিপ্লেসমেন্ট– ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম যাদের রয়েছে তাদের টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ কম হয়। কারও আবার পৌরুষত্বের বিকাশ হয় না বা হলেও পরে থমকে যায়। অণ্ডকোষের নিষ্ক্রিয়তা থেকে এই সমস্যাগুলো হয়। সেক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রতিস্থাপন করে কিছুটা হলেও সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায়। ওষুধ হিসাবে খাওয়া বা ইনজেকশন দিয়ে বা বড়দের ক্ষেত্রে জেল প্রয়োগ-সহ আরও কয়েকটা উপায়ে এই হরমোন প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা হয়। এর ফলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে- যেমন, গলা ভারী, মুখে ও শরীরে লোমের আধিক্য, পেশী দৃঢ় হয়, এনার্জি লেভেল বাড়ে, যৌনজীবনে আগ্রহ বা ইচ্ছা বাড়ে। তবে, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট-এর এই প্রক্রিয়া প্রজননে অক্ষমতার সমাধানে কাজে আসে না। বরং সহায়ক গর্ভাধান পদ্ধতির সাহায্য নেওয়ার সময় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বন্ধ রাখা হয়।
২)থেরাপি– ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমের বেশ কিছু উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য শারীরিক, মানসিক থেরাপির সাহায্য নেওয়া যায়। যেমন ‘ফিজিক্যাল থেরাপি’ করে পেশী মজবুত করা যায় আবার কথা বলতে যাদের অসুবিধা হয় তারা ‘স্পিচ থেরাপি’ করতে পারে। অবসাদ, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার মতো মানসিক সমস্যাগুলির জন্য ‘মেন্টাল থেরাপি’ বা কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নেওয়া যায়। এই সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের সাহায্য করার জন্য ক্লাসরুমে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশেষ মনোনিবেশের দরকার। নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিউরোসাইকোলজিক্যাল টেস্ট করে দেখা দরকার শিশুর বোধের বিকাশে কতটা উন্নতি হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ অটিস্টিক।
৩)সার্জারি- স্তনের আকার কমানোর জন্য সার্জারি করা যেতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম এমন একটা দুর্ঘটনা যাতে কারও কোনও হাত নেই। না বাবা, না মা না বাইরের কোনও অনুঘটক। কেন হয়, কাদের হয়, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা সম্ভব নয়। শুধু এটুকুই বলা যায়, বাবা-মায়ের বয়স বেশি হলে বিশেষ করে মায়ের বয়স ৪০-এর উপরে হলে ঝুঁকি থাকে। জিনগত এই ত্রুটি মেরামতের কোনও উপায় না থাকলেও সমস্যাটি সময় থাকতে চিহ্নিত করা এবং তা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সাহায্য নিতে মনে দ্বিধা রাখা উচিত হয়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নমালা
১) ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম কী বংশগত?
না, এটি একটি জেনেটিক দুর্ঘটনা মাত্র। বংশ পরম্পরায় এটি প্রবাহিত হয় না। এমনকী একটি সন্তানের এই উপসর্গ থাকলে পরবর্তী সন্তানের এই উপসর্গে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
২) ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম থাকলে কী বাবা হওয়া যায়?
ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমের অন্যতম উপসর্গ হল শুক্রাণু উৎপাদন না হওয়া বা খুব কম পরিমাণে উৎপাদন হওয়া। সমীক্ষা বলছে প্রজননে অক্ষম পুরুষদের মধ্যে ৩.১ শতাংশ ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত। তবে, এই সিনড্রোম থাকলে যে বাবা হওয়া যায় না এমন নয়। তাছাড়া, শুক্রাণুর সমস্যা খুব বেশি হলে সহায়ক গর্ভাধান পদ্ধতিতে সমাধানের উপায় রয়েছে। টেস্টিকুলার স্পার্ম এক্সট্রাকশন (টিইএসই) করার পরে ইনট্রাসাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন (আইসিএসআই) পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব।
Related Posts
Written by:
Dr. Souren Bhattacharjee
Consultant
Dr. Souren Bhattacharjee is a distinguished IVF specialist with over 32 years of experience, spanning across India and prestigious institutions in the UK, Bahrain, and Bangladesh. His expertise covers the comprehensive management of male and female infertility. He has been trained in infertility management from various reputed institutes in India and UK including the esteemed John Radcliffe Hospital, Oxford, UK.
Over 32 Years of Experience
Kolkata, West Bengal
Our Services
Fertility Treatments
Problems with fertility are both emotionally and medically challenging. At Birla Fertility & IVF, we focus on providing you with supportive, personalized care at every step of your journey towards becoming a parent.Male Infertility
Male factor infertility accounts for almost 40%-50% of all infertility cases. Decreased sperm function can be the result of genetic, lifestyle, medical or environmental factors. Fortunately, most causes of male factor infertility can be easily diagnosed and treated.We offer a comprehensive range of sperm retrieval procedures and treatments for couples with male factor infertility or sexual dysfunction.