হাইড্রোসিল: লক্ষণ, প্রকার ও চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যাপারে অবহিত হোন
- Published on February 27, 2024
Table of Contents
ভূমিকা
ফার্টিলিটি সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে তা শারীরিক ও মানসিক, দুই দিক থেকেই যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির জন্ম দেয়। এই ধরনের একটি শারীরিক পরিস্থিতি হল পুরুষদের ক্ষেত্রে হাইড্রোসিল যা ফার্টিলিটিকে প্রভাবিত করে। হাইড্রোসিল একটি সাধারণ মেডিকেল পরিস্থিতি যাতে পুরুষের অণ্ডকোষের চারপাশে তরল পদার্থ জমা হতে থাকে এবং তার ফলে সেটি ফুলে যায় এবং অস্বস্তির সূচনা হয়। এই ব্লগে, আমরা হাইড্রোসিলের বিভিন্ন উপসর্গ, কারণ, প্রকার ও চিকিৎসার বিকল্প এক্সপ্লোর করে দেখব।
হাইড্রোসিলের লক্ষণগুলি কী কী?
পুরুষদের স্ক্রোটাম বা কুঁচকিতেযন্ত্রণাহীন স্ফীতির> মতো ঘটনা ঘটলে তাকে সাধারণভাবে হাইড্রোসিল বলে মনে করা হয়। এই স্ফীতির আকার আলাদা আলাদা হতে পারে এবং স্ফীতি ইউনিল্যাটারাল বা একটি দিকে (যেখানে অণ্ডকোষের একটি দিকই প্রভাবিত হয়) অথবা বাইল্যাটারাল বা উভয় দিকে (যেখানে অণ্ডকোষের দুটি দিকই প্রভাবিত হয়) প্রসারিত হতে পারে।সারা দিন ধরে এই স্ফীতি বাড়তে পারে এবং রাত্রে শোয়ার সময় তা কম হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, হাইড্রোসিলের কারণে অসুবিধা বা অস্বস্তির অনুভূতি হতে পারে অথবাস্ক্রোটামকে বেশ ভারী বলে মনে হতে পারে।
কী কী কারণে হাইড্রোসিল হয়?
হাইড্রোসিল বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। এখানে কয়েকটি সাধারণ কারণের বিষয়ে আলোচনা করা হল:
- জন্মগত হাইড্রোসিল: এই ধরনের হাইড্রোসিল সদ্যোজাত বা কয়েক মাসের শিশুদের মধ্যে দেখা যায় এবং প্রসেসাস ভ্যাজিনালিস নামের একটি টিউবের মতো আকৃতির কাঠামো ঠিকমতো বন্ধ না হওয়ার (nonclosure) কারণে হয়। এই কাঠামোটি ভ্রূণাবস্থার বিকাশ চলাকালীন অন্ডকোষকে স্ক্রোটাম থলিতে নেমে আসতে সাহায্য করে। বেশির ভাগ পুরুষের ক্ষেত্রেই এটি বন্ধ থাকে, কিন্তু যদি এটি ঠিকভাবে বন্ধ না হয়, তাহলে পেটের থেকে নিঃসৃত কিছু তরল এই টিউব বেয়ে অণ্ডকোষ তথা স্ক্রোটামে এসে জমা হতে পারে এবং তার ফলেই হাইড্রোসিল সংক্রান্ত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।
- অ্যাকোয়ার্ড বা অর্জিত হাইড্রোসিল: অর্জিত হাইড্রোসিল পরবর্তী জীবনে হতে পারে এবং অণ্ডকোষ বা তার চারপাশের কলাতন্ত্রে কোনও ধরনের প্রদাহ বা আঘাতের ঘটনা ঘটলে এই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। এপিডিডাইমিটিস বা যৌনাচারের ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার মতো কিছু নির্দিষ্ট সংক্রমণের কারণেও অর্জিত হাইড্রোসিল দেখা দিতে পারে।
- ইডিওপ্যাথিক বা অজ্ঞাত কারণে হওয়া হাইড্রোসিল: কিছু কিছু ক্ষেত্রে, হাইড্রোসিল হওয়ার কোনও নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এগুলিকে তখন ‘ইডিপ্যাথিক হাইড্রোসিল’ বলে অভিহিত করা হয়।
হাইড্রোসিলের বিভিন্ন প্রকারগুলি কী কী?
উৎসের উপরে ভিত্তি করে হাইড্রোসিলকে দু’টি প্রধান প্রকারে বিভক্ত করা যায়:
- কমিউনিকেটিং হাইড্রোসিল: এই প্রকারের হাইড্রোসিল তখনই হয় যখন অ্যাবডোমিনাল ক্যাভিটি ও স্ক্রোটামের মধ্যে কোনও কমিউনিকেশন স্থাপিত হয় এবং তার ফলে ক্যাভিটিতে থাকা তরল স্ক্রোটাল স্যাক বা থলিতে নেমে আসতে পারে। এই ধরনের কমিউনিকেটিং হাইড্রোসিল বেশির ভাগ সময় জন্মগত হার্নিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে।
- নন-কমিউনিকেটিং হাইড্রোসিল: নন-কমিউনিকেটিং হাইড্রোসিল তখনই ঘটে যখন অ্যাবডোমিনাল ক্যাভিটির সাথে স্ক্রোটামের কোনও কানেকশন থাকে না। ফ্লুইড বা তরল তৈরি ও শোষণের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা থাকার ফলে স্ক্রোটাল স্যাকবা থলিতে তরল জমে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
হাইড্রোসিলের চিকিৎসা কীভাবে করা হয়?
হাইড্রোসিলের চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের বিষয়ের উপর নির্ভর করে, তার মধ্যে অণ্ডকোষের স্ফীতির আকার, কোনও ব্যক্তিবিশেষের হওয়া অস্বস্তি বা অনুভূত যন্ত্রণা এবং এর অন্তর্নিহিত কারণ পড়ে।
- পর্যবেক্ষণ: কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ছোট ও উপসর্গ-বিহীন হাইড্রোসিলের ক্ষেত্রে, পর্যবেক্ষণ করে চলারই সাজেশন দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীর কাছে নিয়মিত ফলো-আপ করা আবশ্যক যা এর স্ফীতির আকার বা উপসর্গের ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন হয়ে থাকলে তা মনিটর করা সম্ভব হয়।
- ওষুধপত্র: হাইড্রোসিলের কারণে কোনও ব্যক্তির অস্বস্তি, অসুবিধা বা যন্ত্রণার অনুভূতি হলে তার জন্য ওষুধপত্র সাজেস্ট করা হতে পারে। নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAID) প্রদাহ কম করতে ও লক্ষণগুলি দূর করতে সহায়তা করতে পারে।
- অ্যাস্পিরেশন: অ্যাস্পিরেশন সংক্রান্ত পদ্ধতিতে হাইড্রোসিলের কারণে জমা ফ্লুইডকে একটি সূঁচ বা সিরিঞ্জের মাধ্যমে বাইরে নির্গমন করানো হয়। যদিও এই পদ্ধতিকে একটি সুস্পষ্ট ও স্থায়ী চিকিৎসা বলে মনে করা হয় না, কারণ পরে ভবিষ্যতে আবারও ফ্লুইড জমা হতে পারে।
- সার্জিকাল মধ্যস্থতা: অনেক বড় ও লক্ষণীয়ভাবে বড় আকারে ছড়িয়ে পড়া হাইড্রোসিল সংক্রান্ত পরিস্থিতির ক্ষেত্রে প্রায়শই সার্জারিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। সার্জিকাল প্রক্রিয়ায় অণ্ডকোষের চারধারে স্যাক বা থলিকে সরিয়ে দেওয়া বা মেরামত বা রিপেয়ার করা পড়ে এবং এর ফলে ভবিষ্যতে আর তরল জমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
উপসংহার
সন্তান লাভ করতে চাওয়া দম্পতিদের কাছে হাইড্রোসিল সংক্রান্ত সমস্যা যথেষ্ট হতাশাজনক হয়ে থাকে। এর লক্ষণ, কারণ, প্রকার ও চিকিৎসার বিকল্প বোঝার মাধ্যমে মূল্যবান ইনসাইট প্রদান করা যায় এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রয়াস চলাকালীন তথ্যনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিদের সহায়তা করতে পারে। আপনার যদি মনে হয় যে আপনার হাইড্রোসিল হয়েছে অথবা আপনার ফার্টিলিটি নিয়ে কোনও সংশয় হচ্ছে, তাহলে পুরুষদের ফার্টিলিটি সংক্রান্ত সমস্যার ব্যাপারে বিশেষ অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কোনও স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীর সাথে আলোচনা করে নিতে হবে। তাঁরাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশিকা দিতে পারবেন এবং আপনার নির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা উপযুক্ত চিকিৎসা বিকল্প সাজেস্ট করতে পারবেন।
পুরুষ ও মহিলাদের ফার্টিলিটি সংক্রান্ত সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা বিকল্পের সম্পর্কে জানতে, আপনি বিড়লা ফার্টিলিটি ও আই.ভি.এফ. ক্লিনিকের উপরে আস্থা রাখতে পারেন। আধুনিক ওষুধপত্র ও সার্জারির সুষম ও সামঞ্জস্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও যুগান্তকারী কৌশল ও পদ্ধতি গ্রহণ করার মাধ্যমে তারা আপনার মাতা-পিতা হওয়ার স্বপ্নকে সাকার করার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মনে রাখবেন: এই ব্লগে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যেই প্রদান করা হয়েছে। এগুলিকে মেডিকেল সংক্রান্ত পরামর্শ হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না। আপনার নির্দিষ্ট চাহিদা অনুসারে তৈরি করা চিকিৎসা বিকল্প ও আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি করা নির্দেশিকা পেতে, অনুগ্রহ করে একজন স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীর কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
1) হাইড্রোসিলের লক্ষণ বা উপসর্গগুলি কী কী?
স্ক্রোটাম থলি বা স্যাকে স্ফীতি হলে হাইড্রোসিল হয় এবং এটি ফ্লুইড জমা হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে পড়ে যন্ত্রণাহীন, নরম ও মসৃণ স্ফীতি যা স্ক্রোটাম স্যাকের একটি বা দুই দিকেই হতে পারে। যথেষ্ট শারীরিক অ্যাক্টিভিটিও দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে এই স্ফীতি আরও বেড়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাইড্রোসিলের জন্য স্ক্রোটামে অস্বস্তির বা টান লাগার অনুভূতি হয়।
2) সাধারণত হাইড্রোসিল কী কী কারণে হয়ে থাকে?
হাইড্রোসিল বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে যার মধ্যে স্ক্রোটামের মধ্যে ফ্লুইড বা তরলের উৎপাদন ও শোষণের মতো নানা ধরনের কারণ পড়তে পারে। অল্পবয়স্ক শিশুদের ক্ষেত্রে, হাইড্রোসিল সেই স্যাকটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ না হওয়ার জন্য হতে পারে, যেটি সংশ্লিষ্ট শিশুর ভ্রূণাবস্থার বিকাশ চলাকালীন টেস্টিকল বা অণ্ডকোষকে ধরে রাখে। সংক্রমণ, স্ক্রোটামে ব্যথা পাওয়া, প্রদাহ, টিউমার অথবা এমনকি হার্নিয়ার কারণে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের হাইড্রোসিল হতে পারে।
3) হাইড্রোসিলের কি বিভিন্ন প্রকার রয়েছে?
হ্যাঁ, হাইড্রোসিলের ক্ষেত্রে দুটি প্রধান প্রকার দেখা যায়: কমিউনিকেটিং ও নন-কমিউনিকেটিং। কমিউনিকেটিং হাইড্রোসিল তখনই হয় যখন অ্যাবডোমিনাল ক্যাভিটির সাথে স্ক্রোটামের একটি কানেকশন থাকে এবং তার ফলে ফ্লুইড সেই পথে স্ক্রোটাম স্যাকের ভিতরে ঢুকতে বা বেরোতে পারে। কিন্তু নন-কমিউনিকেটিং হাইড্রোসিল ফ্লুইড জমা হলেই দেখা দেয়, কিন্তু সেক্ষেত্রে ফ্লুইড অ্যাবডোমিনাল ক্যাভিটিতে ফিরে যাওয়ার কোনও রাস্তা থাকে না। কমিউনিকেটিং হাইড্রোসিল ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এবং পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে নন-কমিউনিকেটিং হাইড্রোসিলের লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
4) প্রধানত কী কী উপায়ে হাইড্রোসিলের চিকিৎসা করা হয়?
বয়স, হাইড্রোসিলের সাইজ, অনুভূত উপসর্গ ও রোগীদের পছন্দের বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে হাইড্রোসিলের চিকিৎসা করা হয়। খুবই কমবয়সী ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কোনও ধরনের ইন্টারভেনশন বা মধ্যস্থতা ছাড়াই এক বছরের মধ্যে বেশিরভাগ হাইড্রোসিল সংক্রান্ত সমস্যার নিজে থেকেই সমাধান হয়ে যায়। তবে অনেক বেশি দিন ধরে হাইড্রোসিল বজায় থাকলে বা অসুবিধা সৃষ্টি করলে, সার্জিকাল মধ্যস্থতার কথা ভাবা যেতে পারে। পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য স্ক্রোটাম থেকে অতিরিক্ত ফ্লুইড বা তরল বাইরে নির্গমন করানো বা সরিয়ে দেওয়ার জন্যই সাধারণভাবে সার্জারি সাজেস্ট করা হয়।
5) হাইড্রোসিলের জন্য কি সার্জারিই একমাত্র চিকিৎসা বিকল্প?
হাইড্রোসিলের জন্য় সবচেয়ে সাধারণ ও কার্যকর চিকিৎসা বিকল্পের মধ্যে সার্জারির নামই প্রথমে আসে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে, হাইড্রোসিল অনেক ছোট ও উপসর্গ-বিহীন হলে, ‘অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ’(wait and watch) নীতি গ্রহণ করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে নিয়মিত মনিটর করা হবে এবং এটি নিশ্চিত করা হবে যে কোনও অবস্থাতেই এটি যেন কোনও জটিলতার সৃষ্টি না করে বা খারাপ দিকে না মোড় নেয়।
Related Posts
Written by:
Dr. Sonali Mandal Bandyopadhyay
Consultant
With over 8 years of clinical experience, Dr. Sonali Mandal Bandyopadhyay is an expert in Gynecology and Reproductive medicine. She specializes in educating patients on disease prevention, reproductive health, and infertility management. Also, she is skilled in supervising and treating high-risk obstetrics cases. During her career, she has participated in multiple workshops like International Updated on Women Wellbeing, Fetal Medicine & Imaging Committee, Endoscopic Surgery & Reproductive Medicine, etc.
Howrah, West Bengal
Our Services
Fertility Treatments
Problems with fertility are both emotionally and medically challenging. At Birla Fertility & IVF, we focus on providing you with supportive, personalized care at every step of your journey towards becoming a parent.Male Infertility
Male factor infertility accounts for almost 40%-50% of all infertility cases. Decreased sperm function can be the result of genetic, lifestyle, medical or environmental factors. Fortunately, most causes of male factor infertility can be easily diagnosed and treated.We offer a comprehensive range of sperm retrieval procedures and treatments for couples with male factor infertility or sexual dysfunction.