বীর্যপাত বলতে বোঝায় শরীর থেকে বীর্য নির্গত হওয়া। সঙ্গমের সময় পুরুষের বা তার সঙ্গীর পছন্দের সময়ের আগেই তার শরীর থেকে বীর্য বের হয়ে গেলে, তাকে শীঘ্র পতন বলা হয়।
লিঙ্গ প্রবেশের ঠিক আগে বা পরপরই বীর্য নির্গত হয়। প্রায় 30% পুরুষের শীঘ্র পতন ধরা পড়ে এবং এর জন্য বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক ও জৈবিক কারণ থাকতে পারে।
এটিকে অকাল পতন, দ্রুত বীর্যপাত বা তাড়াতাড়ি বীর্যপাতও বলা হয়। আপনি যদি প্রায়শই এটির সম্মুখীন না হন, তাহলে এ বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। তবে, যদি এটি নিয়মিত ঘটে, তাহলে এটি খুব হতাশাজনক হতে পারে এবং আপনার সম্পর্ককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
তবুও, কাউন্সেলিং, বিলম্বের কৌশল শেখা ও ওষুধ সহ বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা কৌশলের মাধ্যমে এই অবস্থার সমাধান করা যেতে পারে।
শীঘ্র পতনের লক্ষণ
শীঘ্র পতনের লক্ষণ হল লিঙ্গ প্রবেশের পরে তিন মিনিটের বেশি বীর্যপাতকে আটকে রাখতে না পারা।
এছাড়া যে লক্ষণগুলি রয়েছে, সেগুলি হল বিব্রত হওয়া, উদ্বেগ, যন্ত্রণা, বিষণ্নতা ও কঠিন আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক।
শীঘ্র পতনের ধরন
শীঘ্র পতন দু’প্রকারের:
মুখ্য: এটিকে আজীবন প্রাথমিক শীঘ্র পতনও বলা হয়। এটি সবসময়ই থাকে, অর্থাৎ এটি প্রথমবার যৌনসঙ্গমের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে প্রতিবারই থাকে।
গৌণ: গৌণ বা অর্জিত বীর্যপাতের সমস্যা সম্প্রতি হয়ে থাকতে পারে, অর্থাৎ এটি স্বাভাবিক যৌনসঙ্গমের পরে হতে পারে বা মাঝে মাঝে হতে পারে।
শীঘ্র পতনের কারণ
আগে মনে করা হতো যে মানসিক বিষয়গুলিই শীঘ্র পতনের প্রধান কারণ। তবে, গবেষণা থেকে জানা গেছে যে কিছু রাসায়নিক ও জৈবিক কারণেও শীঘ্র পতন হতে পারে।
1. মানসিক কারণ
- নিজেকে অক্ষম মনে করা।
- শারীরিক গঠনে সমস্যা।
- সম্পর্কে সমস্যা।
- অতিরিক্ত উত্তেজনা।
- অভিজ্ঞতা না থাকা।
- মানসিক চাপ।
- নিজের ক্ষমতা সম্বন্ধে উদ্বেগ।
- বিষণ্নতা।
- শারীরিক নির্যাতনের ইতিহাস।
- অত্যন্ত কঠোর নৈতিক পরিবেশে বড় হওয়া।
2. জৈবিক ও রাসায়নিক কারণ:
- ডোপামাইন ও সেরোটোনিন নামক ব্রেন কেমিক্যালের মাত্রা কম থাকা, যেগুলি যৌন উত্তেজনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- অক্সিটোসিন-সহ বিভিন্ন হরমোনের অনিয়মিত মাত্রা।
- মুত্রনালী ও প্রোস্টেট গ্রস্থিতে সংক্রমণ ও প্রদাহ।
- থাইরয়েডের সমস্যা।
- বার্ধক্য।
- ডায়াবেটিস মেলিটাস।
- একাধিক স্ক্লেরোসিস।
- অত্যধিক মাত্রায় মদ্যপান।
- ড্রাগের অপব্যবহার।
- ধ্বজভঙ্গ (ইরেক্টাইল ডিসফাংশন)।
শীঘ্র পতনের সমস্যা কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
শীঘ্র পতনের সমস্যা নির্ণয় করার কিছু নির্দিষ্ট বিষয় আছে।
কোনও ব্যক্তি যদি প্রতিবার লিঙ্গ প্রবেশ করানোর 3 মিনিটের মধ্যে বীর্যপাত করেন, প্রতিবার যৌনসঙ্গমের সময় বীর্যপাত ধরে রাখতে না পারেন অথবা শীঘ্র পতনের সমস্যা যদি তাকে মানসিকভাবে প্রভাবিত করে হতাশ করে দেয় ও তিনি যৌন সঙ্গম এড়িয়ে যান, তাহলে তার শীঘ্র পতনের সমস্যা নির্ণয় করা হতে পারে।
আপনার যদি শীঘ্র পতনের সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। তিনি আপনাকে পরীক্ষা করবেন এবং আপনার সাধারণ শারীরিক স্থিতি, আগে হওয়া কোনও রোগ, আপনার সম্পর্কের অবস্থা এবং আপনার পূর্ববর্তী যৌন অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে প্রশ্ন করবেন।
তিনি আপনাকে প্রতিবার শীঘ্র পতন হয় কিনা, এই সমস্যা কত দিন ধরে হচ্ছে, কত বার অন্তর এটি হয় ইত্যাদি প্রশ্ন করতে পারেন।
এছাড়া, আপনি নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ বা ভেষজ প্রোডাক্ট খান কিনা, আপনার মদ্যপানের অভ্যাস আছে কিনা বা আগে কোনও ড্রাগের অপব্যবহার করেছেন কিনা, এই বিষয়েও তিনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
তিনি যদি শীঘ্র পতন হওয়ার কোনও মেডিক্যাল কারণ আছে বলে সন্দেহ করেন, তাহলে তিনি কোনও সংক্রমণ, হরমোনের ত্রুটি বা অন্যান্য সমস্যা জানার জন্য ল্যাব টেস্ট প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
শীঘ্র পতনের চিকিৎসা
শীঘ্র পতনের চিকিৎসা এটির কারণের উপর নির্ভর করে। কাউন্সেলিং, আচরণগত থেরাপি ও ওষুধ, এই চিকিৎসার কয়েকটি উপায়, যেগুলি এই সমস্যা দূর করার জন্য এককভাবে বা অন্যান্য পদ্ধতির সঙ্গে একত্রে ব্যবহৃত হতে পারে:
1. আচরণগত থেরাপি
দু’টি পদ্ধতি বীর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে, স্টপ-স্টার্ট পদ্ধতি এবং স্কুইজ পদ্ধতি।
স্টপ-স্টার্ট পদ্ধতি বীর্যপাতের আগের সংবেদন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে আসলে বীর্যপাত না করে, তা থামিয়ে ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে আবার সেই পদ্ধতি শুরু করতে হয়।
স্কুইজ পদ্ধতিতে বীর্যপাতের আগে লিঙ্গের মুখ চিপে ধরতে হয়। এর ফলে বীর্যপাতের সম্ভাবনা কমে ও থেমে যায়।
2. শরীরচর্চা
কিছু সময় পেলভিক পেশী দুর্বল হওয়ার ফলে গৌণ বীর্যপাত হয়। পেশী সবল করে তুললে এই সমস্যা দূর হতে পারে। পেলভিক ফ্লোর মাসল এক্সারসাইজ বা কিগেল এক্সারসাইজ পেলভিক পেশী সবল করে তোলার ক্ষেত্রে উপযুক্ত।
3. লিঙ্গের সংবেদনশীলতা কমানো
যৌনসঙ্গমের 15 থেকে 30 মিনিট আগে লিঙ্গটি অসাড় করার জন্য স্প্রে বা স্ক্রিমের মতো উপাদান লাগালে লিঙ্গের সংবেদনশীলতা কমে যায় এবং এর ফলে শীঘ্র পতনের সম্ভাবনা কমে।
কন্ডোম পরলেও এটি করতে সুবিধা হতে পারে। যে কন্ডোমগুলিতে অ্যানাসথেটিক ওষুধ থাকে, সেগুলি সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়। কখনও কখনও দু’টি কন্ডোম ব্যবহার করলেও শীঘ্র পতনের সমস্যা আটকাতে পারে।
4. কাউন্সেলিং
একজন সাইকোলজিস্টের কাছে কাউন্সেলিং করালে মানসিক চাপ দূর করতে সক্ষম হওয়া যায় এবং উদ্বেগ ও বিষণ্নতা দূর হয়, যা শীঘ্র পতনের কারণ হতে পারে।
কাউন্সেলিং-সহ মেডিকেশন শীঘ্র পতনের ক্ষেত্রে আরও কার্যকর চিকিৎসা। এছাড়া, এটির চিকিৎসার জন্য কাপলস থেরাপি একটি ভালো বিকল্প।
5. ওরাল মেডিকেশন
কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টে শীঘ্র পতন কমানোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, সেই কারণে শীঘ্র পতনের চিকিৎসায় এগুলি ব্যবহার করা হয়। একইভাবে, কিছু পেনকিলারও এটির চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কার্যকর।
যদি শীঘ্র পতনের কারণ ধ্বজভঙ্গ (ইরেক্টাইল ডিসফাংশন) হয়, তাহলে সেটির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধও কাজে লাগতে পারে।
6. নিজের সহায়তার মাধ্যমে
কিছু পদ্ধতিতে আপনি নিজেকে সাহায্য করতে পারেন, যেমন আসন্ন বীর্যপাতের আগে দীর্ঘ শ্বাস নেওয়া, যৌনসঙ্গম চলাকালীন অন্য কোনও বিষয়ে মন দেওয়া এবং বিভিন্ন পোজিশনে সঙ্গম করা। এর ফলে কিছুটা সহায়তা হতে পারে।
7. জীবনযাপনে পরিবর্তন
জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন, যেমন সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা, মদ্যপান কমানো, ধূমপান ছেড়ে দেওয়া, যোগব্যায়াম ও মেডিকেশন করা ইত্যাদি এই লক্ষণগুলি দূর করতে পারে।
উপসংহার
আপনার যদি শীঘ্র পতনের সমস্যা বহুদিন ধরে চলতে থাকে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অত্যাধুনিক পরিকাঠামোতে যুগলের ফার্টিলিটি ও স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে আপনার নিকটবর্তো বিড়লা আইভিএফ অ্যান্ড ফার্টিলিটি সেন্টারে যান অথবা ডাঃ দীপিকা মিশ্রর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন।