ডিসপারেউনিয়া কারণ, লক্ষণ এবং চিকিত্সা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করুন
- Published on September 12, 2023
Table of Contents
সহবাসে ব্যথা? হতে পারে ডিসপারেউনিয়া
প্রথমবার সঙ্গমের সময় যোনিতে ব্যথা লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু পরবর্তী কালে সেই ব্যথা আর থাকে না। কোনও কারণে ব্যথা না কমলে এবং প্রতিবার সঙ্গমের সময় ও পরে ব্যথা হলে তা চিন্তার বিষয়। হতে পারে এটি ডিসপারেউনিয়ার লক্ষ্মণ। শুধু মেয়েদের নয়, ছেলেদেরও এই সমস্যা হতে পারে। সমস্যা যারই হোক না কেন, চেপে না রেখে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হলে উপকার পাওয়া যায়। মুশকিল হল, আমাদের দেশে যৌনসমস্যা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে একরাশ সঙ্কোচ, লজ্জা ও জড়তা কাজ করে। ডিসপারেউনিয়া থাকলেও তা নিয়ে আলোচনা করতে চায় না কেউ। এই থেকে অনেকসময় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয় দম্পতির মধ্যে। শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব বাড়তে থাকে ক্রমশ।
ডিসপারেউনিয়া কী
ডিসপারেউনিয়া হল সহবাসের সময় ও পরে যোনিদেশে ব্যথা। কারও ব্যথা হয় যোনিদ্বারে (ভালভা), কারও আবার যোনির ভিতরে এমনকী জরায়ু, তলপেটেও ব্যথা হয়। লুব্রিকেশনের অভাব থেকে শুরু করে যোনিদেশে সংক্রমণ, আঘাত, ক্ষত, মেনোপজের মতো হাজারটা কারণ থাকতে পারে এর পিছনে। সামাজিক, মানসিক কারণেও এই সমস্যায় ভোগে অনেকে। ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, বিশ্বে অন্ততপক্ষে ৩৫ শতাংশ মহিলা জীবনের কোনও না কোনও সময় ডিসপারেউনিয়া সমস্যায় ভুগেছেন।
ডিসপারেউনিয়ার প্রকারভেদ
সঙ্গমের সময় কোথায় ব্যথা লাগছে এবং কতটা ব্যথা লাগছে তার উপরে নির্ভর করে ডিসপারেউনিয়া দু’প্রকার।
১) ইনট্রাঅরবিটাল বা সুপারফিশিয়াল ডিসপারেউনিয়া- এই প্রকারে সঙ্গমের শুরুতে যোনির মুখভাগে ব্যথা লাগে। সাধারণত লুব্রিকেশনের অভাবে এটা হয়। যোনিতে আঘাত বা সংক্রমণ থেকেও এই সমস্যা হতে পারে।
২) কলিশন ডিসপারেউনিয়া- অনেকসময় সহবাসের গভীরতায় ব্যথা হতে পারে। সঙ্গমের অপ্রচলিত কিছু ভঙ্গিমায় এটা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সার্ভিক্স অর্থাৎ জরায়ুর গ্রীবা বা তলপেট পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে যায়। শারীরিক কোনও সমস্যা বিশেষ করে শ্রোণীদেশে কোনও সার্জারি হলে সেখান থেকেও এই ব্যথা হতে পারে।
ডিসাপারেউনিয়ার কারণ
ডিসপারেউনিয়ার সমস্যা মূলত মহিলাদের হলেও পুরুষেরাও এই সমস্যার ভোগেন। তবে, দু’পক্ষের কারণটা ভিন্ন।
মহিলাদের ডিসপারেউনিয়ার কারণ
১) অপ্রতুল যোনিক্ষরণ- সাধারণত সঙ্গমের সময় যৌন উদ্দীপনার জেরে যোনিতে উপস্থিত গ্ল্যান্ড থেকে রস ক্ষরণের ফলে যোনিদেশ পিচ্ছিল বা তৈলাক্ত হয়ে ওঠে। কোনও কারণে এই ক্ষরণ না হলে যোনিদেশ শুষ্ক থাকে, তখন সঙ্গমের সময় ব্যথা লাগে। মূলত যৌন উদ্দীপনা জাগ্রত না হলে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। এক্ষেত্রে যৌনসুখ বাড়ানোর একাটাই উপায়- ফোরপ্লে বা শৃঙ্গার। হরমোনাল বা অন্য শারীরিক কারণেও যোনির লুব্রিকেশন কমে যেতে পারে।
২) ভ্যাজাইনাল অ্যাট্রফি- যোনিদেশের লাইনিং পাতলা, শুষ্ক, খসখসে হয়ে গেলে সঙ্গমের সময় জ্বালাবোধ হতে পারে। একে বলে ভ্যাজাইনাল অ্যাট্রফি। ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ কমে যাওয়ার কারণে এটা হয়। সাধারণত মেনোপজের সময় ও পরে এই পরিস্থিতি হয়। এছাড়া, কিছু ওষুধের প্রভাবে বিশেষত কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির পরে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। জন্ম নিরোধক বড়ির মতো কিছু ওষুধের প্রভাবে এটা হতে পারে। সদ্যোজাতকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ভ্যাজাইনাল অ্যাট্রফি স্বাভাবিক।
৩) ভ্যাজাইনিসমাস- সঙ্গমের সময় যোনির আশপাশের পেশীতে খিঁচুনি (স্প্যাজম) থেকে ব্যথাবোধ হতে পারে। আঘাত লাগার ভয় বা পূর্বের কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা থেকে এই খিঁচুনি হয়।
৪) ভালভা ভেসটিবুলাইটিস- যোনিদ্বারে জ্বালাবোধ বা ভালভা ভেসটিবুলাইটিস হল ডিসপারেউনিয়ার আর এক কারণ। যোনিদেশে ইস্ট ইনফেকশন থেকে শুরু করে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই, যৌনবাহিত সংক্রমণ থেকে এই ধরনের জ্বালাযন্ত্রণা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সঙ্গমের সময় ব্যথা লাগতে পারে।
৫) সার্ভিক্সে ব্যথা- শিশ্ন যদি অনেক গভীরে গিয়ে সার্ভিক্স বা জরায়ুর গ্রীবাতে আঘাত করে, তখন ব্যথা লাগতে পারে।
৬) জরায়ুর সমস্যা- জরায়ুতে ফাইব্রয়েডের উপস্থিতি যৌনসঙ্গমের সময় ব্যথার কারণ হতে পারে।
৭) এন্ডোমেট্রিওসিস- এন্ডোমেট্রিয়াম লাইনিং জরায়ুর বাইরে অন্যত্র জমা হতে থাকলে সেই সমস্যার নাম এন্ডোমেট্রিওসিস। এর জেরে যোনিদেশে ব্যথা লাগতে পারে।
৮) সিস্ট- ডিম্বাশয়ে সিস্ট থাকলে সেখান থেকেও সঙ্গমকালীন ব্যথা হতে পারে।
৯) পেলভিক সার্জারি, এফজিএম (ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন) বা সন্তান প্রসবের পরবর্তী সময়ে সহবাসে ব্যথা লাগতে পারে। এক্ষেত্রে কমপক্ষে ছয় সপ্তাহের ব্যবধান দিলে এই সমস্যা চলে যায়।
১০) যোনিদেশে ত্বকের সমস্যা- যৌনাঙ্গের চারপাশে এক্সিমা, লাইকেন প্লান্স, লাইকেন
স্ক্লোরোসাস ইত্যাদি ত্বকের সংক্রমণ রোগ থেকে ডিসপারেউনিয়ার সমস্যা হতে পারে। আঁটোসাটো অপরিচ্ছন্ন অন্তর্বাস, যৌনাঙ্গে ব্যবহৃত সুগন্ধী, জামাকাপড় কাচার সাবান থেকে এই ধরনের সংক্রমণ হতে পারে।
১১) প্রসবের সময় পেরিনিয়াম অর্থাৎ যোনি ও মলদ্বারের মধ্যবর্তী কোনও জায়গা ছিঁড়ে গেলে বা কেটে গেলে সেখান থেকে ব্যথা হতে পারে।
১২) বিরল হলেও ডিসপারেউনিয়ার আর একটি কারণ হতে পারে ভ্যাজাইনাল অ্যাজেনেসিস। এটি একটি জন্মগত রোগ। এক্ষেত্রে যোনির গঠন অসম্পূর্ণ থাকে। যোনিপথের গভীরতা ও প্রস্থ
কম হওয়ায় সঙ্গমের সময় ব্যথা লাগে।
১২) সবশেষ, কিন্তু অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হল মানসিক। অবসাদ, আশঙ্কা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি নেতিবাচক মনোভাবের কারণে অনেক সময় যৌন উদ্দীপনা জাগ্রত হয় না। তখন লুব্রিকেশনের অভাবে ব্যথা লাগে।
পুরুষদের ডিসপারেউনিয়ার কারণ
অনেকসময় ছেলেদের সঙ্গমের সময় শিশ্নে ব্যথা লাগে। সাধারণত পুরুষাঙ্গের কোনও প্রকার অস্বাভাবিকত্ব থেকে এটা হয়ে থাকে।
১) লিঙ্গত্বকে আঘাত- ঘষা লেগে বা কোনও কারণে লিঙ্গত্বক বা ফোরস্কিনে ক্ষত হলে তা থেকে ব্যথা হতে পারে।
২) যৌনবাহিত সংক্রমণ- গনোরিয়া বা এই ধরনের যৌন সংক্রমণ কিংবা ইস্ট ইনফেকশন থেকে সঙ্গম যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।
৩) বিকলাঙ্গ পুরুষাঙ্গ- পেয়রোনিজ ডিসিজ় বা এই ধরনের কোনও বিকৃতি থেকে শিশ্নে ব্যথা লাগতে পারে সঙ্গমকালীন।
৪) যন্ত্রণাদায়ক লিঙ্গোত্থান- লিঙ্গোত্থানের সময় যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির নাম প্রায়াপিজ়ম।
ডিসপারেউনিয়ার লক্ষ্মণ
১) ডিসপারেউনিয়ার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্মণ হল সঙ্গমের সময় ও পরে যোনিদেশে ব্যথা।
২) যৌনাঙ্গের গভীরে ও তলপেটে ব্যথা।
৩) অস্বস্তি ও জ্বালাভাব।
৪) তলপেটে খিঁচ ব্যথা।
৫) বিরল হলেও অনেকসময় রক্তপাত হতে পারে।
ডিসপারেউনিয়া নির্ণয়
১) যোনিদেশে কোথায় ব্যথা লাগছে সেটা বোঝার জন্য চিকিৎসক পেলভিক এক্সামের পাশাপাশি, রেক্টাল পরীক্ষা ও প্যাপ টেস্ট করতে দেবেন।
২) সংক্রমণ রয়েছে কি না জানতে যোনিস্রাব বা মূত্র পরীক্ষা করা হতে পারে।
৩) ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ভিতরের গঠনগত কোনও ত্রুটি বা ক্ষত বা কোনও সমস্যা রয়েছে কি না জানা যায়। এন্ডোমেট্রিওসিস, ফাইব্রয়েডস বা সিস্ট থাকলে এতে ধরা পড়বে।
৪) কোনও কিছুতেই সমস্যাটি ধরা না পড়লে ল্যাপারোস্কোপি করে দেখা হয় সমস্যার উৎস কোথায়।
ডিসপারেউনিয়া চিকিৎসা
সঙ্গমের সময় ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সবসময়ই যে তার জন্য চিকিৎসা দরকার এমনটা নয়। যেমন, লুব্রিকেশনের অভাবে এই সমস্যা হলে তার উপায় ফোরপ্লে বা শৃঙ্গারের সময় বাড়ানো। ‘ওয়াটার বেসড লুব্রিক্যান্ট’ ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়। প্রসবের পরে-পরেই যৌনসংসর্গ করলে ব্যথা লাগা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সময় দিতে হবে। অন্তত ছয় সপ্তাহের ব্যবধান দিলে পর এই সমস্যা আপনা থেকে চলে যায়।
আবার কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। যেমন, ইস্ট্রোজেন ক্রিম ব্যবহার করে যোনির শুষ্কতার সমস্যা দূর করা যায়। মেনোপজ থেকে শুষ্কতার সমস্যা হলে ওসপেমিফেন খাওয়া যেতে পারে।
সংক্রমণ হলে তা সারানোর জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ দেওয়া হয়।
এন্ডোমেট্রিওসিস বা সিস্ট বা এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে উপায় সার্জারি।
বিষয়টি মানসিক হলে সেক্সুয়াল থেরাপি করা যেতে পারে। বিশেষ করে পুরনো কোনও শারীরিক নির্যাতনের স্মৃতি বা দুর্ঘটনা তাড়া করে বেড়ালে সেখান থেকে মুক্তি মিলতে পারে কাউন্সেলিংয়ে।
‘কেগেল কনট্র্যাকশনস’ অভ্যাস করে পেলভিক ফ্লোর পেশীর শক্তি বাড়ানো যায়। এর ফলে ভ্যাজাইনিসমাস বা যোনির চারপাশের পেশীর খিঁচুনিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
যোনিদেশে সংক্রমণ থেকে সমস্যা হয়ে থাকলে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দেন।
সবশেষে বলা যায়, বিভিন্ন কারণে ডিসপারেউনিয়া হয়ে থাকে। অধিকাংশ কারণেরই চিকিৎসা সম্ভব বা অন্ততপক্ষে চিকিৎসা করে উপসর্গটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মানসিক সমস্যা থাকলে তার জন্য কাউন্সেলিং করতে হবে। কিন্তু সবার আগে, সমস্যা যে আছে সেটা মানতে হবে এবং এই নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। না হলে কোনও ভাবেই সমস্যাটি সমাধান করা যাবে না।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নমালা
১) যোগব্যায়াম করে কী ডিসপারেউনিয়ায় উপকার পাওয়া যায়?
‘কেগেল কনট্র্যাকশনস’ অভ্যাস করে পেলভিক ফ্লোর পেশীর শক্তি বাড়ানো যায়। এর ফলে সঙ্গমের সময় ভ্যাজাইনিসমাস বা যোনির চারপাশের পেশীর খিঁচুনিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া স্ট্রেস, উদ্বেগ অবসাদের মতো মানসিক সমস্যাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে যোগব্যায়াম মনে উৎফুল্ল ভাব আনে। মনের আরাম যৌন উদ্দীপনা জাগায়, যোনির ক্ষরণ বা লুব্রিকেশনের জন্য যা সবচেয়ে জরুরি।
২) যোনিদেশে শুষ্কতার সমস্যায় কী খেলে উপকার মেলে?
ভিটামিন এ যোনিদেশে শুষ্কতা দূর করে। খাবারে বা সাপ্লিমেন্টের সাহায্যে ভিটামিন এ ও বি কমপ্লেক্স নিলে উপকার পাওয়া যায়। বিটা ক্যারোটিন যুক্ত খাবার যেমন গাজর, শাকপাতা, ব্রকোলি ইত্যাদি খেলে উপকার মেলে। এছাড়া ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ভ্যাজাইনাল অ্যাট্রফির সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে। ভিটামিন ই রয়েছে এমন খাবার যেমন কুমড়োর বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, বাদাম, উদ্ভিজ্জ তেল ইত্যাদি ডায়েটে রাখতে হবে।
Related Posts
Written by:
Dr. Swati Mishra
Consultant
Dr. Swati Mishra is an internationally trained obstetrician-gynecologist and reproductive medicine specialist Her diverse experience, both in India and the USA, has positioned her as a respected figure in the field of IVF. expert in all forms of laparoscopic, hysteroscopic, and surgical fertility procedures which includes IVF, IUI, Reproductive Medicine and Recurrent IVF and IUI Failure.
Over 18 Years of Experience
Kolkata, West Bengal
Our Services
Fertility Treatments
Problems with fertility are both emotionally and medically challenging. At Birla Fertility & IVF, we focus on providing you with supportive, personalized care at every step of your journey towards becoming a parent.Male Infertility
Male factor infertility accounts for almost 40%-50% of all infertility cases. Decreased sperm function can be the result of genetic, lifestyle, medical or environmental factors. Fortunately, most causes of male factor infertility can be easily diagnosed and treated.We offer a comprehensive range of sperm retrieval procedures and treatments for couples with male factor infertility or sexual dysfunction.