সন্তানলাভে অক্ষমতার সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে বিশ্বে এবং সমীক্ষা বলছে, সন্তানহীনতার প্রতি তিনটি ঘটনায় একটিতে পুরুষসঙ্গী দায়ী। মুশকিল হচ্ছে, এক্ষেত্রে একজন নারীর সমস্যা ও চিকিৎসা নিয়ে যতটা তৎপরতা থাকে, পুরুষসঙ্গীর অনুর্বরতার ক্ষেত্রে ততটা নয়। সন্তান উৎপাদনে অক্ষমতার সঙ্গে পৌরুষত্বহীনতাকে গুলিয়ে ফেলেন অনেকে এবং চিকিৎসার প্রথম ধাপ অর্থাৎ সমস্যাটাকে মেনে নেওয়ার পথে তখন বাধা হয়ে দাঁড়ায় ‘মেল ইগো’। অথচ, বাবা হতে না পারা আর পুরুষত্বহীনতা মোটেই এক জিনিস নয়। নির্দিষ্ট পরিমাণে সুস্থ স্বাভাবিক ও গতিশীল শুক্রাণুর অভাবে সন্তান হতে অসুবিধা হয়। নানা কারণে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যেতে পারে। এই কারণটা খুঁজে বার করে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
পুরুষ-অনুর্বরতা কী (Male Infertility meaning in Bengali)
এককথায়, প্রজননে সক্ষম নারীকে গর্ভবতীকরণে ব্যর্থতা হল পুরুষ অনুর্বরতা। ছেলেরা যখন যৌবনে পৌঁছয়, তখন থেকেই টেস্টিস বা শুক্রথলিতে অবিরত শুক্রাণু তৈরি হতে শুরু করে। প্রতিদিন প্রায় ১২ কোটির বেশি শুক্রাণু তৈরি হয়। এমনিতে একটি ভ্রূণের জন্য একটি ডিম্বাণু আর একটি শুক্রাণুই যথেষ্ট। কিন্তু সেই একটি শুক্রাণুকে সুস্থ-সবল ও সচল হতে হবে। গুণগত মানের যে প্যারামিটারগুলি রয়েছে (শুক্রাণুর সংখ্যা, আকার, গতিশীলতা, বীর্যের পরিমাণ, ঘনত্ব, রং, তরলতা ইত্যাদি) তার সব ক’টিতে পাশ না করতে পারলে সন্তানলাভে অক্ষম হয় পুরুষ।
পুরুষ অনুর্বরতার কারণ (Causes of Male Infertility in Bengali)
- শুক্রাণুর সমস্যা- পুরুষদের সন্তানলাভে অক্ষমতার অন্যতম প্রধান কারণ, বীর্যরসে পর্যাপ্ত সংখ্যায় সুস্থ-সচল-সবল শুক্রাণু না থাকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র নির্দেশিকা (২০২১) অনুযায়ী ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলনের জন্য পুরুষের প্রতি মিলিলিটার বীর্যরসে অন্তত ১৬ মিলিয়ন শুক্রাণুর প্রয়োজন। এর পরেই যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল গতিশীলতা (মোটিলিটি) বা শুক্রাণুর সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা। হু-র নির্দেশিকায় অন্তত ৪২ শতাংশের সচল থাকার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ শতাংশের বেশি শুক্রাণু স্বাভাবিক আকারযুক্ত হতে হবে। এছাড়া শুক্রাণুর গতিশীলতা আর প্রাণশক্তির জন্য বীর্যের ফ্রুক্টোজ লেভেল ঠিক থাকা দরকার। পিএইচ-এর মাত্রা ৭.২-৭.৮ এর মধ্যে থাকতে হবে। ৩০-৬০ মিনিটের মধ্যে বীর্য তরলে পরিণত না হলে শুক্রাণু এগোতে পারে না। বীর্যের পরিমাণ ২-৫ এমএল স্বাভাবিক (হু-র রেফারেন্স লিমিট ১.৪ এমএল)।
- রে়ট্রোগ্রেড ইজাকুলেশন- অনেকসময় বীর্যরস বাইরে না বেরিয়ে পিছন দিকে মূত্রথলিতে (ব্লাডার) চলে যায় (রেট্রোগ্রেড ইজাকুলেশন)। ব্লাডার বা প্রস্টেটে অস্ত্রোপচার, শিরদাঁড়ায় আঘাত, ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণ থেকে এই সমস্যা হতে পারে।
- ইনফেকশন- প্রজননতন্ত্রে কোথাও কোনও ইনফেকশন হলে (যেমন এপিডিডিমাইটিস, অর্কিটিস) সন্তানলাভে অক্ষমতার সমস্যা হয়। যৌনাঙ্গের সংক্রমণ যেমন ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া, প্রস্টেটে প্রদাহ, এইচআইভি-র মতো ইনফেকশনে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়।
- ভ্যারিকোসিল- অণ্ডথলির (স্ক্রোটাম) শিরা বড় হয়ে যাওয়াকে বলে ভ্যারিকোসিল। পুরুষ অনুর্বরতার এটা অন্যতম কারণ।
- শারীরিক ত্রুটি- কোনও শিশুর জন্মের সময় অণ্ডকোষ দেহের ভেতরেই রয়ে যায়। এক্ষেত্রে সন্তানলাভে সমস্যা হয়।
- ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম– এটি একটি জেনেটিক সমস্যা। যাদের থাকে তাদের একটা এক্স ক্রোমোজোম বেশি থাকে (মোট ৪৭টা ক্রোমোজোম)। এই বাড়তি ক্রোমোজোম সরাসরি পুরুষ প্রজননতন্ত্রে খারাপ প্রভাব ফেলে। টেস্টোস্টেরন কম হয়। ফলে শুক্রাণুর উৎপাদন কম হয়।
- অস্ত্রোপচার- অন্ডকোষে কোনও অস্ত্রোপচার বা হার্নিয়ার মতো বড় অপারেশন থেকে নানা সমস্যা হয়।
- প্রজনননালীতে সমস্যা- দেহের যে নালীগুলো অণ্ডকোষ থেকে শুক্রাণু বহন করে নিয়ে যায়, তা অনুপস্থিত থাকা বা কোনও রোগ বা আঘাতজনিত কারণে নালীতে ব্লকেজ থাকলে অনুর্বরতার সমস্যা হয়।
- অ্যান্টিবডি- অ্যান্টি স্পার্ম অ্যান্টিবডি (এএসএ) শুক্রাণুর ক্ষতি করে। ১০-৩০ শতাংশ পুরুষ অনুর্বরতার কারণ এই সমস্যা।
- হরমোনের সমস্যা- হাইপোথ্যালামাস, পিটিউটারি গ্রস্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনের ভারসাম্যের অভাবে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যেতে পারে। কম টেস্টোস্টেরনে পুরুষ প্রজননক্ষমতা কমে যায়। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে অসুবিধা হয়।
- ওষুধ- বেশ কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে প্রজননে প্রভাব ফেলে। যেমন, টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, কেমোথেরাপি ইত্যাদি। দীর্ঘ দিন ধরে অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ব্যবহার, আলসার ও আর্থাইটিসের কিছু ওষুধের জন্য শুক্রাণু উৎপাদন কমে যেতে পারে।
- পরিবেশগত বা বাহ্যিক কারণ- বেশ কিছু রাসায়নিকের সংস্পর্শে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায় বলে গবেষণায় জানা গিয়েছে। সীসা বা এই ধরনের ‘হেভি মেটেরিয়াল’, বেঞ্জিন, জাইনিল, কীটনাশক প্রভৃতির ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে পুরুষ প্রজননতন্ত্রে। উচ্চমাত্রা রেডিয়েশনের সংস্পর্শে এলে শুক্রাণুর উৎপাদন কমে যায়। বাহ্যিক কারণে পুরুষ প্রজননঅঙ্গ গরম হয়ে গেলে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যেতে পারে। এই জন্য দীর্ঘ সময় ধরে ল্যাপটপ কোলে বসে থাকা বা আঁটোসাঁটো অন্তর্বাস পরতে বারণ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
- জীবনযাত্রা- মদ্যপান, ধূমপান বা তামাকঘটিত যে কোনও নেশা শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে। অবসাদ, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ইত্যাদি মানসিক সমস্যা এবং অতিরিক্ত ওজনের ফলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় ও শুক্রাণুর সংখ্যা কমে।
- বয়স- গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৪০ বছরের পর পুরুষদের ক্ষেত্রেও সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা কমে আসে।
পুরুষ অনুর্বরতার লক্ষ্মণ (Symptoms of Male Infertility in Bengali)
পুরুষের সন্তানলাভে অক্ষমতার সবচেয়ে বড় লক্ষ্মণ হল যৌনজীবনে সমস্যা। বীর্যক্ষরণে সমস্যা বা ইরেক্টাইল ডিসফাংশন কিংবা কম বীর্যপাতের ক্ষেত্রে অনুর্বরতার সমস্যা স্বাভাবিক। দুর্বল লিবিডো বা যৌন মিলনের ইচ্ছা কম থাকলে সন্তানলাভের পথে সমস্যা হবে। পুরুষ বন্ধ্যাত্বের কারণগুলির সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য লক্ষণ এবং উপসর্গ রয়েছে যা প্রতিটি পুরুষের মধ্যে আলাদাভাবে উপস্থিত হতে পারে।
পুরুষ বন্ধ্যাত্বের কোন সুস্পষ্ট লক্ষণ নেই। সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- ইরেকশন অর্জন বা বজায় রাখতে অসুবিধা
- বীর্যপাতের সমস্যা
- অণ্ডকোষ এলাকায় ব্যথা, ফোলা বা পিণ্ডের উপস্থিতি
- সংক্রমণ
- শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (পুনরাবৃত্ত)
- পুরুষদের অস্বাভাবিক স্তন বৃদ্ধি (গাইনোকোমাস্টিয়া)
- মুখের বা শরীরের চুলের বৃদ্ধি কমে যাওয়া
কোন পুরুষদের অনুর্বরতার ঝুঁকি আছে? (Who is at risk of male infertility?)
যদি আপনি এমন কেউ হন যিনি;
- ধূমপান করেন, অত্যধিক অ্যালকোহল পান করেন বা ক্ষতিকারক ওষুধ ব্যবহার করেন
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলকায়
- ক্ষতিকারক বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসেন
- অণ্ডকোষে অতিরিক্ত গরম বা আঘাত
- যদি আপনার কোন বড় অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে, যেমন পেলভিক বা পেটের অস্ত্রোপচার
- অতীত বা বর্তমানের সংক্রমণ
- যদি আপনার ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে
পুরুষ-অনুর্বরতা নির্ধারণের পরীক্ষা (Male Infertility Test in Bengali)
- সিমেন অ্যানালাইসিস– প্রথমেই শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান জানার জন্য ‘সিমেন অ্যানালাইসিস টেস্ট’ করতে দেন চিকিৎসকেরা। মূলত বীর্যরসের শারীরবৃত্তিয় বৈশিষ্ট্য (রঙ, গন্ধ, পিএইচ, সান্দ্রতা বা ভিসকোসিটি এবং তরলতা), শুক্রাণুর সংখ্যা (কনসেনট্রেশন), আকার (মরফোলজি) ও গতিশীলতার (মোটিলিটি) বিশ্লেষণ করা হয় এই পরীক্ষায়।
- হরমোন পরীক্ষা- হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি গ্রন্থি ও শুক্রাশয় নিঃসৃত কিছু হরমোনের মাত্রা জানার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। টেস্টোস্টেরণের মাত্রা ঠিক আছে কিনা দেখা হয়।
- আলট্রাসাউন্ডের সাহায্যে পরীক্ষা– উচ্চ তরঙ্গ আলট্রাসাউন্ড প্রবাহের সাহায্যে শুক্রাশয় ও সংযুক্ত গঠন খতিয়ে দেখা হয়। প্রস্টেটে কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা বা শুক্রবাহী নালীতে কোনও ব্লকেজ আছে কি না জানতে ‘ট্রান্সরেকটাল আলট্রাসাউন্ড’ করা হয় অনেক সময়।
- পোস্ট-ইজাকুলেশন ইউরিন্যালাইসিস- মূত্র পরীক্ষায় শুক্রাণু পাওয়া গেলে বুঝতে হবে শুক্রাণু সামনে শিশ্ন দিযে না বেরিয়ে পিছন দিকে মূত্রথলিতে চলে যাচ্ছে (রেট্রোগ্রেড ইজাকুলেশন)।
- জিনগত পরীক্ষা- শুক্রাণুর ঘনত্ব খুব কম হলে জিনগত সমস্যা রয়েছে কি না দেখা হয়। সেক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা যায় ওয়াই ক্রোমোজোমে কোনও অস্বাভাবিকত্ব আছে কিনা।
- বায়োপ্সি- ক্ষেত্রবিশেষে শুক্রাশয়ের বায়োপ্সি করে দেখা হয় শুক্রাণুর সংখ্যা ঠিক আছে কি না। এক্ষেত্রে শুক্রাণু উৎপাদনে কোনও সমস্যা না পাওয়া গেলে বুঝতে হবে শুক্রাণু পরিবহণে কোথাও সমস্যা হচ্ছে।
- বিশেষ পরীক্ষা- শুক্রাণুর কার্যক্ষমতা পরখের জন্য বিশেষ কিছু পরীক্ষা রয়েছে, যেখানে দেখা হয় বীর্যক্ষরণের পর কতক্ষণ শুক্রাণু বেঁচে থাকে বা কতটা ভালভাবে সে ডিম্বাণুতে প্রবেশ করতে পারছে ইত্যাদি।
পুরুষ অনুর্বরতার চিকিৎসা (Male Infertility Treatment in Bengali)
- সার্জারি- যদি দেখা যায় যে শুক্রাণু উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু কোনও বাধা থাকার জন্য বেরোতে পারছে না, সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করে ব্লকেজ সারানো হয়। ভ্যারিকোসিল-এর সমস্যা দূর করা যায় অস্ত্রোপচারে। পুরুষের শরীরে আগে ভ্যাসেক্টোমি করা হলে রিভার্সাল সার্জারিতে পুনরায় প্রজননক্ষম করা যায়। স্পার্ম রেট্রিভাল পদ্ধতিতে শুক্রাশয় বা এপিডিডাইমিস থেকে সরাসরি শুক্রাণু পুনরুদ্ধার করা যায়।
- ইনফেকশন চিকিৎসা- প্রজনন নালীতে (রিপ্রোডাকটিভ ট্র্যাক্ট) বা যৌনাঙ্গে ইনফেকশন থাকলে অ্যান্টিবায়েটিক দেওয়া হয়।
- বীর্যক্ষরণে সমস্যার চিকিৎসা- এক্ষেত্রে ওষুধ বা প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়।
- হরমোনের চিকিৎসা- হরমোনের সমস্যা থাকলে তার প্রয়োজনীয় ওষুধ বা চিকিৎসা (হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি) রয়েছে।
- সহায়ক গর্ভাধান- ইকসি বা ইন্ট্রা-সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন করে অতি অল্প সংখ্যক শুক্রাণুর সাহায্যেও সন্তান পাওয়া সম্ভব। কিন্তু শুক্রথলি বা টেস্টিসের কার্যকারিতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে তার চিকিৎসা করা মুশকিল। সেক্ষেত্রে দাতা শুক্রাণুর সাহায্য নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এআরটি (অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি) পদ্ধতিতে নিজস্ব বা দাতার থেকে উন্নতমানের শুক্রাণু সংগ্রহ করে তা সরাসরি গর্ভাশয়ে প্রবেশ করিয়ে (আইইউআই) বা বাইরে ল্যাবরেটরিতে নিষিক্তকরণের (আইভিএফ) পর জরায়ুতে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে গর্ভধারণ সম্ভব।
পুরুষের প্রজননক্ষমতা বাড়ানোর উপায় (Ways to Increase Male Fertility in Bengali)
সুস্থ জীবনযাত্রা শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। মদ্যপান, ধূমপান বা নেশা পরিত্যাগ করলে শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ে। স্ট্রেস দূর করতে হবে। ওজন কমিয়ে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যচর্চা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে বিএমআই নিয়ন্ত্রণে আনলে ভাল ফল মেলে। রাত জেগে কাজ বা মোবাইলে ব্যস্ত থাকা শরীরের পক্ষে ভাল নয়। জাঙ্ক ফুড, প্রসেসড ফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। তৈলাক্ত সামুদ্রিক মাছ, আখরোট, বেদানা, ডালিম, কুমড়োর বীজ, মেথি, ডিম, পালং শাক, কলা, পেয়ারা, অশ্বগন্ধা, রসুন, অয়স্টার বা ঝিনুক, অ্যাসপারাগাস ইত্যাদি খাবারগুলি পুরুষদের শুক্রাণুর উৎপাদন ও মান বাড়াতে সাহায্য করে।
বেশিক্ষণ ল্যাপটপ কোলে কাজ না করা, ঢিলে অন্তর্বাস পরা, ক্ষতিকারক রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলে পোশাক পরিবর্তন ও স্নান করার মতো সাবধানতাগুলি অবলম্বন করলে উপকার মিলতে পারে। সাপ্লিমেন্ট হিসাবে ভিটামিন ডি আর জিঙ্ক নেওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও সাপ্নিমেন্ট না নেওয়াই ভাল।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নমালা (FAQ)
শুক্রাণু কি প্রতিদিন তৈরি হয়?
পুরুষরা প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ শুক্রাণু তৈরি করে। গড়ে, শরীর প্রতিদিন প্রায় ১০০-২০০ মিলিয়ন শুক্রাণু উত্পাদন করতে পারে, তবে সঠিক সংখ্যা পৃথক কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
প্রথমে কোন ভ্রূণ স্থানান্তর করতে হয়?
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) প্রথম বিকশিত হওয়ার সময়, তাজা ভ্রূণ স্থানান্তরই ছিল একমাত্র ধরনের স্থানান্তর। তবে, ক্রায়োপ্রিজারভেশন কৌশলের উন্নতির ফলে, এখন তাজা এবং হিমায়িত ভ্রূণ স্থানান্তর (এফইটি) উভয়ই সাধারণ।
৩ দিনের ভ্রূণ স্থানান্তরের পর কি হয়?
৩ দিন বয়সী ভ্রূণ স্থানান্তরের পর তৃতীয় দিনে, হ্যাচিং সম্পূর্ণ হয়। ভ্রূণের ডিমের বাইরের শেল খোলা হয়, যেখান থেকে ডিপ্লয়েড কোষ বের হয়, জরায়ুর আস্তরণে ইমপ্লান্টেশনের জন্য প্রস্তুত। এন্ডোমেট্রিয়ামে ব্লাস্টোসিস্ট প্রবেশের প্রক্রিয়া গড়ে ২ থেকে ৪ দিন সময় নেয়। এই সময়ে, জরায়ুর পৃষ্ঠের সাথে ভ্রূণের প্রথম যোগাযোগ ঘটে।
ভ্রূণ স্থানান্তর কি বেদনাদায়ক?
IVF এর সময় ভ্রূণ স্থানান্তর সাধারণত একটি দ্রুত এবং ন্যূনতম আক্রমণাত্মক পদ্ধতি যা সাধারণত ভালভাবে সহ্য করা যায় এবং ন্যূনতম অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই করা হয়, যদিও কিছু ক্লিনিক রোগীকে শিথিল করতে সাহায্য করার জন্য হালকা প্রশান্তিদায়ক ওষুধ দিতে পারে।
ভ্রূণ স্থানান্তর প্রক্রিয়ার সময়, আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিংয়ের মাধ্যমে জরায়ুমুখের মধ্য দিয়ে একটি পাতলা ক্যাথেটার আলতো করে ঢোকানো হয়। জরায়ু গহ্বরে ভ্রূণ স্থানান্তর সাধারণত ব্যথাহীন হয়, যদিও কিছু মহিলার হালকা চাপ বা খিঁচুনির অনুভূতি হতে পারে। এই অস্বস্তি সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয় এবং প্রক্রিয়াটির কিছুক্ষণ পরেই কমে যায়।
ভ্রূণ স্থানান্তরের পরে, কিছু মহিলার মাসিকের খিঁচুনির মতো হালকা খিঁচুনি বা পেলভিক অস্বস্তি হতে পারে। এই লক্ষণগুলি সাধারণত অস্থায়ী হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সেরে যায়।
ভ্রূণ স্থানান্তরের পর কতটুকু ওজন তোলা যায়?
ভ্রূণ স্থানান্তরের পরে ১০ পাউন্ড বা তার বেশি ওজন তোলা উচিত নয়। এমন কার্যকলাপ এড়িয়ে চলা উচিত, যা শরীরে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।