হস্তমৈথুনের অতিরিক্ত অভ্যাস কি সন্তানহীনতার কারণ হতে পারে?

Author : Dr. Karishma Makhija October 24 2024
Dr. Karishma Makhija
Dr. Karishma Makhija

MBBS (Gold Medalist), DGO, DNB

5+Years of experience:
হস্তমৈথুনের অতিরিক্ত অভ্যাস কি সন্তানহীনতার কারণ হতে পারে?

হস্তমৈথুন বা স্বমেহন হল এক ধরনের যৌনক্রিয়া যা স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। শুধু যৌনসুখ লাভ করাই নয়, মানসিক দুশ্চিন্তা কমানো থেকে শুরু করে হরমোনের ভারসাম্য বজায়-সহ নানা উপকারী দিক রয়েছে হস্তমৈথুনের। নিয়মিত হস্তমৈথুনের ফলে প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে এবং প্রস্টেট সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যাও কমে। কিন্তু যেমন কোনও কিছুই বেশি ভাল নয়, তেমনই অতিরিক্ত হস্তমৈথুনেরও খারাপ দিক রয়েছে। শারীরবৃত্তিয় ও মানসিক স্বাস্থ্যে অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ক্ষতিকারক প্রভাব পরোক্ষে সন্তানহীনতার সমস্যা ডেকে আনতে পারে। অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিকগুলির পাশাপাশি এটি কী ভাবে সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

 

আলোচনার বিষয়বস্তু

  • অতিরিক্ত হস্তমৈথুন কাকে বলে?
  • অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ক্ষতিকারক প্রভাব।
  • হস্তমৈথুন ও পুরুষের সন্তানহীনতা।
  • হস্তমৈথুন ও মহিলাদের সন্তানধারণে অক্ষমতা।
  • অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের অভ্যাস থেকে মুক্তির উপায়।
  • প্রশ্নমালা- হস্তমৈথুনের জন্য কী চুল পড়তে পারে? হস্তমৈথুন বেশি করলে কি ওজন কমে যায়?

 

অতিরিক্ত হস্তমৈথুন কাকে বলে?

হস্তমৈথুন বা স্বমেহন হল একধরনের কামোদ্দেপক প্রক্রিয়া। সুখদায়ক এই কাজটিতে অনেক সময় আসক্ত হয়ে পড়ে লোকজন। এর পিছনে অন্যতম একটা কারণ হল, হস্তমৈথুনের সময় মস্তিস্কে ডোপামাইন ও এন্ডোরফিনের মতো ‘ফিল গুড কেমিক্যালস’ নিঃসৃত হয় যা মন ভাল করে দেয়, অবসাদ-দুশ্চিন্তার মতো মানসিক সমস্যাগুলো অনেকাংশে দূর করে। এই ‘ফিল গুড কেমিক্যালস’গুলো ব্রেনকে বারবার উদ্দীপনামূলক কাজটি করার জন্য উস্কাতে থাকে। যার ফলে হস্তমৈথুনে আসক্তি তৈরি হতে পারে। দিনের অধিকাংশ সময় হস্তমৈথুন ও এই সংক্রান্ত ভাবনায় কেউ নিয়োজিত থাকলে সেটা অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে বলা চলে। অনেকসময় এই অভ্যাস এতটাই গ্রাস করে ফেলে যে কোনও ভাবনাচিন্তা ছাড়াই হস্তমৈথুন করতে থাকে আসক্ত মানুষটি। এর ফলে সমাজে, কর্মক্ষেত্রে তাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সুস্থ সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় বা গড়েই ওঠে না। এমনকী পরোক্ষে সন্তানহীনতার মতো সমস্যাও আসতে পারে।

 

অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ক্ষতিকারক প্রভাব

অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে এই সমস্যাগুলি হতে পারে-

  • ব্রেনে অতি উদ্দীপনা।
  • এন্ডোরফিন ও ডোপামাইনের উপর অতিনির্ভরতা।
  • যৌনাঙ্গে নমনীয়তা ও ফোলা ভাব (শোথ)।
  • যৌনাঙ্গে সংবেদনশীলতা কমে যাওয়া।
  • অপরাধবোধ ও লজ্জা।
  • আত্মবিশ্বাসের অভাব।
  • ধৈর্য ও মনোনিবেশ কমে যাওয়া।
  • পর্ন ছবি দেখায় আসক্তি।
  • অসামাজিক ব্যবহার।
  • সমাজে মিশতে না পারা, সুস্থ সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলা।

 

অতিরিক্ত হস্তমৈথুন ও সন্তানহীনতা

সন্তানহীনতার সঙ্গে অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। তবে হস্তমৈথুনের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি শারীরবৃত্তিয় ও মানসিক অবস্থা সন্তানহীনতার সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

 

অতিরিক্ত হস্তমৈথুন ও পুরুষদের সন্তানহীনতা

পুরুষদের বাবা হতে না পারার পিছনে হস্তমৈথুনের কোনও প্রভাব এখনও পর্যন্ত গবেষণায় পাওয়া যায়নি। বরং স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার মতো হস্তমৈথুনেও পুরনো শুক্রাণু বেরিয়ে যাওয়ার ফলে নতুন সুস্থ শুক্রাণু উৎপাদন বাড়ে। যার ফলে পুরুষদের শুক্রাণুর মান ও সংখ্যা বাড়ে বলে সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে। হস্তমৈথুনের জেরে শুক্রাণুর ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়ার স্বপক্ষে প্রমাণও দেখিয়েছে গবেষণাগুলি। এখন প্রশ্ন হল, তাহলে হস্তমৈথুন কখন ও কী ভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে? 

 

সাধারণ ভাবে বলা যায়, একজন পুরুষ মানুষ ২-৩ দিন বীর্যক্ষরণ না করলে পর তার বীর্যে সবচেয়ে ভাল মানের শুক্রাণু পাওয়া যায়। তাই সন্তানের জন্ম যখন লক্ষ্য, তখন সঙ্গমের দু’তিন দিন আগে হস্তমৈথুন বন্ধ রাখলেই ভাল। এমনকী সহায়ক গর্ভাধান পদ্ধতিতেও ল্যাবরেটরিতে বীর্য (সিমেন) জমা দেওয়ার দু’তিন দিন আগে যৌনসংসর্গ বা হস্তমৈথুন না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

 

এবার আসি অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ক্ষতিকারক দিক প্রসঙ্গে। অতিরিক্ত অর্থাৎ দিনে একাধিকবার স্বমেহন করলে তার খারাপ প্রভাব পড়ে সন্তানসৃষ্টির প্রক্রিয়ায়। বিশেষ করে দিনে একাধিকবার হস্তমৈথুন যদি সপ্তাহভর চলতে থাকে বা টানা চার দিনও চলে। সাধারণ ভাবে একজন পুরুষের দেহ প্রতি সেকেন্ডে দেড় হাজারের মতো শুক্রাণু তৈরি করে এবং প্রতি বার বীর্যক্ষরণে মোটামুটি ৩০০ মিলিয়ন শুক্রাণু বেরিয়ে যায়। অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করলে শুক্রাণু উৎপাদনের চেয়ে শরীর থেকে বেশি পরিমাণে শুক্রাণু বেরিয়ে যায়। 

 

এছাড়া যারা হস্তমৈথুনের জন্য ‘সেক্স-টয়’ ব্যবহার করে, তাদের ক্ষেত্রে এর আর একটা খারাপ প্রভাব রয়েছে। কম দামী ‘সেক্স-টয়’গুলি নিম্ন মানের উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। এক্ষেত্রে ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে শুক্রাণুর উৎপাদন কমে যায় ও তা নিম্নমানের হয়। ‘সেক্স-টয়ে’ এমন কিছু রাসায়নিকও থাকে যা থেকে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে।

এছাড়া অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের সঙ্গে জড়িত মানসিক সমস্যাগুলি সরাসরি লিঙ্গ উত্থাপন, সঙ্গমের ক্ষমতা ও বীর্যপাতে প্রভাব ফেলে। হস্তমৈথুনে আসক্ত ব্যক্তির দাম্পত্য জীবনে সমস্যা তৈরি হতে পারে, যার প্রভাব পড়ে সন্তানধারণে। 

 

হস্তমৈথুন ও মহিলাদের সন্তানধারণে অক্ষমতা

হস্তমৈথুনের সঙ্গে মহিলাদের সন্তানধারণে অক্ষমতার কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।  কারণ মেয়েদের সন্তানধারণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে ছেলেদের মতো যৌন উদ্দীপনা হল কী হল না, তার কোনও সম্পর্ক থাকে না বা অর্গাজ্যমের সঙ্গে ডিম ফোটার কোনও সম্পর্ক নেই। রজস্বলা হওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে মহিলাদের শরীরে একটি করে ডিম ফোটে যেটি ফ্যালোপিয়ান টিউবে এসে উপস্থিত হয়। এর ১২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনও শুক্রাণু যদি সেই ডিমটিকে নিষিক্ত করতে পারে তাহলেই ভ্রূণের সৃষ্টি হয়। আর ডিমটি নিষিক্ত না হলে প্রকৃতির নিয়মে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় ঋতুস্রাবের সময়। তাই মহিলাদের হস্তমৈথুনের সঙ্গে সন্তানধারণের ক্ষমতার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কোনও সম্পর্কই পাওয়া যায়নি। বরং হস্তমৈথুন করলে মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা কমে, যা আদপে সন্তানধারণের পথে সাহায্য করে। 

 

অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের অভ্যাস থেকে মুক্তির উপায়

সরাসরি সন্তানহীনতার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের অভ্যাস জীবনে কিছু সমস্যা, জটিলতা ডেকে আনে। তাই হস্তমৈথুন যাতে আসক্তিতে পরিণত না-হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আসক্তি হয়ে গেলে তা থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে নীচের পথগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে-

  • পর্নোগ্রাফি দেখার অভ্যাস এড়িয়ে চলতে হবে। 
  • হস্তমৈথুনের বদলে অন্য কোনও কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে বা ‘হবি’ খুঁজে বার করতে হবে।
  • ‘ফিল গুড কেমিক্যালস’ নিঃসরণ ও স্ট্রেস কমানোর জন্য শরীরচর্চা করা যায়।
  • বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে মেলামেশা বাড়াতে হবে।
  • কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
  • সাপোর্ট গ্রুপ বা কাউন্সিলিংয়ের সাহায্য নিয়েও উপকার মেলে।
  • সঙ্গীর সঙ্গে যৌনসংসর্গের সময় আগে থেকে নির্ধারিত করে হস্তমৈথুনের অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

 

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নমালা

 

১. হস্তমৈথুনের ফলে কি চুল পড়ে যেতে পারে?

না, হস্তমৈথুনের সঙ্গে চুল পড়ে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর অতিরিক্ত অভ্যাস জীবনে অস্বাভাবিকত্ব ডেকে আনে। তবে, চুল পড়ার সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই।

 

২. হস্তমৈথুনের ফলে কি ওজন কমে যায়?

হস্তমৈথুনের সঙ্গে ওজন কমে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে স্ট্রেসের কারণে যে অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায়, যার ফলে ওজন বাড়ে, সেটা কমানোর একটা পরোক্ষ উপায় হতে পারে হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুনের ফলে ‘ফিল গুড কেমিক্যালস’ নিঃসৃত হয়। এটি স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। পরোক্ষ এই দিকটি ছাড়া ওজন কমার সঙ্গে কোনও যোগ নেই হস্তমৈথুনের। 

 

Our Fertility Specialists

Recent Blogs