Table of Contents
কয়েক মাস আগে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ফুটবলের মহাতারকা পেলে। শুধু পেলে নন, বিশ্ব জুড়েই অন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ওয়ার্ল্ড ক্যানসার রিসার্চ ফান্ড ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২০ সালে বিশ্বের ১.৯ মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। এই কোলন ক্যানসারের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ হয় সিসিল পলিপ থেকে। গুপ্তঘাতকের মতো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে (যার ভিতর ফাঁপা) গজিয়ে ওঠা এই পলিপ সহজে চোখে পড়ে না এবং অপসারণ করতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। তবু শুরুতেই এই পলিপের উপস্থিতি ধরে ফেললে এবং তার চিকিৎসা করলে ক্যানসারের ঝুঁকি এড়ানো যায়।
পলিপ হল শরীরের কোনও অঙ্গের ভিতরে শ্লেষ্মা ঝিল্লি থেকে গজিয়ে ওঠা টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যার গায়ে মিউকাস মেমব্রেন ও অসংখ্য রক্তনালী থাকে। পলিপ ব্যাঙের ছাতার মতো বৃন্ত দিয়ে সংযুক্ত থাকলে তাকে বলে পেডাঙ্কল, আর বৃন্ত ছাড়া ছোট ছোট ডোমের আকারে টিস্যু লাইনিংয়ের সমান্তরালে গজিয়ে উঠলে তাকে বলে সিসিলি। শরীরের যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি বটুয়ার মতো অর্থাৎ ভিতরে কিছুটা খালি জায়গা থাকে সেখানেই পলিপ হতে পারে। মূত্রথলি, পাকস্থলী, নাক, পিত্তথলি, সারভিক্সের গায়ে পলিপ দেখতে পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বেশি এর উপস্থিতি চোখে পড়ে কোলন বা মলাশয়ে। প্রকৃতিতে বিনাইন হলেও পরবর্তীকালে পলিপ থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে নিরীহ বিবর্ণ শরীরে নেতিয়ে পড়ে থাকা সিসিল পলিপ থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিভিন্ন ধরনের আছে sessile polyps, যেমন:
শরীরের মধ্যে সিসিল পলিপ কেন গড়ে ওঠে তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে এবং এই নিয়ে নানা রকমের মতবাদ রয়েছে। তবে সিসিল সেরাটেড পলিপ মোটামুটি ভাবে ৫০ বছরের বেশি পুরুষদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। আইবিডি অর্থাৎ ‘ইনফ্লেমেটরি বাওল ডিসিজ’ রয়েছে যাদের, তাদের এই পলিপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মোটাদের পলিপ হওয়ার রিস্ক বেশি থাকে এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কম খেয়ে যারা রেড মিট বেশি খায় তাদের এই সমস্যা হওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। যারা বেশি ধূমপান করে বা তামাক সেবন করে তাদের মধ্যেও এই রোগের প্রভাব বেশি। টাটকা খাবারের পরিবর্তে ক্যানড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া আর অতিরিক্ত মানসিক চাপ অল্প বয়সে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই সবের উপরে জিনগত ফ্যাক্টরও কাজ করে। পরিবারে কারও কোলনে পলিপ থাকলে বা কোলন ক্যানসার হলে অন্যদের ঝুঁকি রয়ে যায়। পরিবারে টাইপ টু ডায়াবেটিস যাদের রয়েছে, তাদেরও ঝুঁকি থাকে।
অধিকাংশ সময় শরীরের মধ্যে যে সিসিল পলিপ রয়েছে তা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। চিকিৎসক পরীক্ষা করে বা কোলনোস্কপি করলে টের পাওয়া যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে খামচে ধরার মতো পেটে ব্যাথা, ক্রনিক গ্যাসের সমস্যা, খিদে কমে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়। মলাশয় (কোলন) বা পায়ুদ্বারে (রেক্টাম) পলিপ হলে রোগীর অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার উপসর্গ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে যেটা হয়, সেটা হল এই পলিপের গায়ে যে রক্তনালী থাকে, সেগুলি ফেটে গিয়ে রক্ত পড়ে এবং শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। মলের সঙ্গে তাজা রক্ত বেরোলে অনেকেই সেটাকে পাইসল বলে ভুল করেন। কিন্তু নিজে কিছু আন্দাজ না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। মাঝবয়সের পর মলত্যাগের অভ্যাস বদলে গেলেই সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে যদি পর্যায়ক্রমে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হয়, সঙ্গে রক্তপাত, তাহলে অতি অবশ্য সতর্ক হতে হবে।
আগে যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে যে sessile polyps সনাক্ত করা চ্যালেঞ্জিং এবং সময়ের সাথে সাথে বিপজ্জনক এবং ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। যদিও প্রতিটি সেসিল পলিপ কোলন ক্যান্সারে পরিণত হবে না – একটি গবেষণা এখনও সুপারিশ করে যে যারা পলিপ হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের নিয়মিত স্ক্রিন করা উচিত।
একজন ডাক্তার একটি পরীক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি ব্যবহার করেন sessile polyp.
এই পরীক্ষায়, একটি কোলনোস্কোপ – একটি ক্যামেরা সহ একটি নমনীয় টিউব কোলন আস্তরণ দেখতে ব্যবহৃত হয়। কোন পলিপ আছে কিনা তা দেখার জন্য একজন ডাক্তার মলদ্বারের মাধ্যমে এটি প্রবেশ করান।
যেহেতু পলিপগুলি দেখা কঠিন হতে পারে, একজন ডাক্তার আপনার কোলন লাইনিং (পলিপ বায়োপসি) থেকে টিস্যুগুলির একটি নমুনা নিতে পারেন। তারপর বায়োপসি পরীক্ষা করার ধরন পরীক্ষা করার জন্য একটি ল্যাবে বিশ্লেষণ করা হয় পলিপ সেসাইল এবং এটি ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বহন করে কিনা।
এই পরীক্ষায়, জীবাণুমুক্ত কাপে মলের নমুনা পাওয়া যায়। এগুলি ক্লিনিকে বা বাড়িতে নেওয়া হয় এবং তারপরে একটি পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করা হয়।
বিশ্লেষণের পর, গোপন রক্ত - রক্ত যা খালি চোখে দেখা যায় না – পাওয়া যায়। এই রক্ত একটি রক্তক্ষরণ পলিপ ফলাফল হতে পারে।
অন্যান্য ধরণের স্টুল পরীক্ষাগুলিও একটি থেকে কোন ডিএনএ উপস্থিত আছে কিনা তা নির্ধারণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে sessile polyp.
এই পরীক্ষায়, আপনাকে একটি টেবিলে বিশ্রাম নিতে হবে। একজন ডাক্তার আপনার মলদ্বারে প্রায় 2 ইঞ্চি একটি টিউব ঢোকাবেন। তারপরে, টেবিলটি একটি সিটি স্ক্যানারের মাধ্যমে স্লাইড করবে এবং আপনার কোলনের চিত্রগুলি ক্যাপচার করবে।
এটি ডাক্তারকে দেখতে সাহায্য করবে sessile polyps.
এই পরীক্ষাটি কোলনোস্কোপির মতোই। একজন ডাক্তার আপনার মলদ্বারের ভিতরে একটি নমনীয়, দীর্ঘ টিউব প্রবেশ করান যাতে সিগমায়েড কোলন, অর্থাৎ কোলনের শেষ অংশটি দেখতে এবং সেসিল পলিপের উপস্থিতি পরীক্ষা করে।
নিম্নলিখিত কারণগুলি আপনার ভোগার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে sessile polyps এবং, পালাক্রমে, কোলন ক্যান্সার:
শরীরে সিসিল পলিপ হলেই যে তা বাদ দিতে হবে এমন কোনও কথা নেই। ক্ষতিকারক না হলে পলিপ যেমন রয়েছে, তেমন রেখে দেওয়া যায়। তবে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। কারণ এই সিসিল পলিপ থেকে পরবর্তীকালে ক্যানসার হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। পলিপের আকার দেখে তা ক্যানসারাস না নিরীহ সেই সম্পর্কে একটা আন্দাজ করা যায়। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট পলিপ হলে তা থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কম। ৬-৯ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের পলিপগুলি থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা ৭-১২ শতাংশ। আর ১০ মিলিমিটারের বেশি ব্যাসার্ধের পলিপ হলে তাকে বড় আকারের বলা যাবে। এই ধরনের পলিপ থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা ২০-৩০ শতাংশ। পলিপ ক্যানসারাস হলে চিকিৎসক তা শরীর থেকে বাদ দিতে বলবেন। কোলনোস্কোপি করার সময়েই অনেক সময় এই অপসারণের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। একে বলে পলিপেক্টোমি। কিন্তু ক্যানসার যদি পলিপ থেকে শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে ততদিনে, তাহলে রেডিয়েশন এবং কেমোথেরাপি করতে বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, নিজের শরীরের ভালমন্দ নিজেকে বুঝতে হবে এবং শরীরকে অবহেলা করা চলবে না। পেটে কোনও রকম অস্বস্তি বা ব্যথা, মলত্যাগের ধরনে হঠাৎ পরিবর্তন, রক্তপাত ইত্যাদি বিষয়গুলিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে এবং নিজে বুদ্ধি না খাটিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ শুরুতেই সিসিল পলিপের উপস্থিতি ধরা পড়লে এবং প্রয়োজন বুঝে তা বাদ দিয়ে দিলে পরবর্তীকালে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়।
রোজকার খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাটকা ফলমূল, শাকসব্জি থাকতে হবে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে। ভূষি-সহ আটার রুটি, ওটস, মিলেট ইত্যাদি খেলে ভাল। গবেষণায় জানা গিয়েছে, শস্য দানা ও পর্যাপ্ত ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে অসুখ আটকে দেওয়ার পাশাপাশি কোলোরেক্টাল ক্যানসারের রোগীদের বাঁচার মেয়াদও অনেক বেড়ে যায়। কাজু, পেস্তা, কাঠাবাদাম হোক বা আখরোট, যে কোনও ধরনের বাদাম কোলন ক্যানসার দূরে রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ঝলসানো মাংস, রেড মিট বেশি খেলে ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া, ক্যানসার কোষের বাড়বাড়ন্ত থামিয়ে দিতে পারে হলুদের অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। হলুদের কারকুমিন কোলনের প্রিক্যানসারাস পলিপ দূর করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা দিয়েছে যে নিয়মিত হলুদ খেলে প্রিক্যানসারাস পলিপ কমে যায় বা তাদের বৃদ্ধি কমে যায়।
৫০ বছরের পর পুরুষদের কোলনোস্কোপি করতে বলেন চিকিৎসকেরা। যদি কোলনোস্কোপিতে কোনও পলিপ বা অ্যাডেনোমা ধরা না পড়ে তাহলে আগামী ১০ বছর আর পরীক্ষা করার দরকার নেই। কিন্তু খুব ছোট পলিপ যদি ধরা পড়ে তাহলে হয়তে পাঁচ বছর পরে আবার একবার পরীক্ষা করতে বলা হয়। আর বড় আকারের পলিপ যদি ধরা পড়ে তাহলে একাধিক বার ফলোআপ কোলনোস্কোপি করার দরকার হবে।
এটা সুনির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও পলিপ থেকে শরীরে ক্যানসার যদি হয় তাহলে প্রায় ১০ বছর লেগে যায়।
স্ট্রেস কোলন পলিপের বিকাশ তরাণ্বিত করে। আসলে স্ট্রেস থেকে আনুষঙ্গিক বেশ কিছু খারাপ অভ্যাস তৈরি হয়। মদ্যপান, ধূমপানের মতো অভ্যাস, প্রসেসড ফুড খাওয়া, শরীরচর্চা না করা, রাত জাগা ইত্যাদি যার মধ্যে অন্যতম। এগুলি প্রত্যেকটি ক্যানসারের মারণথাবার দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায় শরীরকে।
কোলোরেক্টাল পলিপ সম্পূর্ণরূপে অপসারিত করা হলে তা ফিরে আসা খুব বিরল ঘটনা। তবে, এই ধরনের রোগীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের নতুন করে আবার পলিপ গজায়। তাই পলিপ অপসারণের তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আবার ফলো-আপ বা কোলনোস্কোপি করে নতুন কোনও পলিপ তৈরি হয়েছে কি না তা দেখে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
মোটামুটি ভাবে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা সময় লাগে এবং সেই দিনই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দু’তিন দিনের মধ্যে রোগী সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়।
Birla Fertility & IVF aims at transforming the future of fertility globally, through outstanding clinical outcomes, research, innovation and compassionate care.
Talk to our fertility experts