পলিসিস্টিক ওভারি রোগ (PCOD) বলতে কী বোঝায়: একটি সংক্ষিপ্ত আউটলুক

Dr. Souren Bhattacharjee
Dr. Souren Bhattacharjee

MBBS, DGO, FRCOG (London)

34+ Years of experience
পলিসিস্টিক ওভারি রোগ (PCOD) বলতে কী বোঝায়: একটি সংক্ষিপ্ত আউটলুক

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) একটি সাধারণ হরমোন সংক্রান্ত সমস্যা যাতে প্রজননক্ষম বয়সের মহিলারা আক্রান্ত হন। হরমোন সংক্রান্ত ভারসাম্যহীনতা, মাসিক ঋতুচক্র অনিয়মিত হওয়া, ওভারি বা ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হওয়া এবং অন্যান্য সম্পর্কিত উপসর্গের মাধ্যমে এই রোগকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। PCOS সম্পর্কিত সমস্যার কারণ স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা শক্ত হতে পারে, কিন্তু যথাযথ তথ্য ও সহায়তার মাধ্যমে আপনি এইসব উপসর্গ ম্যানেজ করে প্রজনন সমস্যার আশঙ্কা নির্মূল করতে পারেন। এই ব্লগে, PCOD-এর বিষয়ে আমাদের জানা যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, যার মধ্যে এই ধরনের রোগ হওয়ার কারণ, রোগ শনাক্তকারী উপসর্গ ও চিকিৎসা পদ্ধতি পড়ে।

PCOD কি?

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা শুধুমাত্র PCOD নামে পরিচিত এই সমস্যাটি মহিলাদের শরীরে হরমোন সংক্রান্ত ভারসাম্যহীনতার কারণে হয় এবং এটি মেয়েদের ডিম্বাশয়ের উপর প্রভাব ফেলে। PCOD সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত মহিলাদের ডিম্বাশয়ের আকার অনেক বেড়ে যায় এবং বাইরের প্রান্তে অনেক ছোট ছোট সিস্ট দেখা যায়। আলাদা করে দেখতে গেলে এইসব সিস্ট ততটা ক্ষতিকর নয়, তবে এদের উপস্থিতির কারণে ডিম্বাশয় থেকে নিয়মিত পর্যায়ে ডিম্বাণু নিঃসরণের প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

কী কী কারণে PCOD সংক্রান্ত সমস্যা ঘটতে পারে?

PCOD হওয়ার যথার্থ কারণ এখনও স্পষ্ট করে বলা যায় না, তবে এই ধরনের রোগের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করা কারণগুলি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সেগুলি হল:

  1. হরমোন সংক্রান্ত ভারসাম্যহীনতা: PCOD সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে, ইনসুলিন ও টেস্টোস্টেরনের মতো হরমোনের অস্বাভাবিক লেভেল লক্ষ্য করা যায় যা ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কাজকর্মকে প্রভাবিত করতে পারে।
  1. জিনতত্ত্ব: জিন বা DNA সংক্রান্ত গবেষণায় এই ধরনের নিদর্শন পাওয়া গেছে যে PCOD সংক্রান্ত সমস্যা বংশগত অর্থাৎ এটি পরিবারের মধ্যে একটি প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়।
  1. ইনসুলিনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা: ইনসুলিনের প্রতিবন্ধকতার কারণে শরীরের কোষে ইনসুলিনের প্রভাব কোনও কাজ করতে পারে না এবং ফলস্বরূপ রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা অনেক বেড়ে য়ায়। এর পরিণতিতে ডিম্বাশয়ে অ্যান্ড্রোজেনস হরমোন (এই ধরনের হরমোন বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যেই দেখতে পাওয়া যায়) তৈরি হতে থাকে।

PCOD-এর লক্ষণগুলি কী কী?

PCOD-এর লক্ষণ বা উপসর্গ বিভিন্ন মানুষের মধ্যে আলাদা আলাদা হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ সবার মধ্যেই কম-বেশি দেখা যায়:

  1. মাসিক ঋতুচক্র অনিয়মিত হওয়া বা তা একদমই না হওয়া: PCOD বা পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা থাকা মহিলাদের মধ্যে অনিয়মিত ঋতুচক্রের সমস্যা দেখা যায় এবং ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু কম তৈরি হওয়ার কারণে কখনও কখনও এই ঋতুচক্র একেবারেই অনুপস্থিত থাকে।
  1. সারা শরীর জুড়ে অত্যধিক চুল বা লোমের বৃদ্ধি: ডিম্বাশয় থেকে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্ড্রোজেন হরমোন নির্গত হওয়ার কারণে মুখে, বুকে, পিঠে ও নিতম্বে চুল বা লোমের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
  1. ব্রণ: PCOD-এর ক্ষেত্রে হরমোন সংক্রান্ত ভারসাম্যহীনতার কারণে মুখে, বুকে ও পিঠের উপরের দিকে ব্রণ বা ফোঁড়া তৈরি হয়।
  1. ওজন বেড়ে যাওয়া: PCOD সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত মহিলাদের পক্ষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইনসুলিন প্রতিবন্ধকতা ও হরমোন সংক্রান্ত ভারসাম্যহীনতার জন্য ওজন ম্যানেজ করাটা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
  1. প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা: PCOD সংক্রান্ত সমস্যার কারণেই বেশিরভাগ মহিলাদের মধ্যে প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে নিয়মিত ডিম্বাণু তৈরি হওয়ার পরিমাণ অনেক কম হয়ে যায় এবং তার কারণে PCOD-এর সমস্যা থাকা মহিলাদের গর্ভবতী হওয়াটা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

PCOD নির্ণয় 

PCOD একজন মহিলার স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে। PCOD নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসা ইতিহাসের মূল্যায়ন, শারীরিক পরীক্ষা, হরমোনের মাত্রা পরিমাপের জন্য রক্ত ​​পরীক্ষা এবং ডিম্বাশয়ের কল্পনা করার জন্য আল্ট্রাসাউন্ডের মতো ইমেজিং পরীক্ষাগুলির সমন্বয় জড়িত থাকে। PCOD চিকিত্সার বিকল্পগুলির লক্ষ্য রোগের লক্ষণগুলি পরিচালনা করা এবং জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস করা। PCOD সমস্যার কিছু সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে থাকতে পারে জীবনযাত্রার পরিবর্তন যেমন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণের জন্য হরমোনের গর্ভনিরোধক, এবং অত্যধিক চুলের বৃদ্ধি বা ইনসুলিন প্রতিরোধের মতো নির্দিষ্ট উপসর্গগুলি মোকাবেলার জন্য ওষুধ।
পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ (PCOD) বিভিন্ন লক্ষণ ও উপসর্গ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে অনিয়মিত বা অনুপস্থিত মাসিক, অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজেন (পুরুষ হরমোন) মাত্রা এবং ডিম্বাশয়ে একাধিক সিস্টের উপস্থিতি। এখন যেহেতু আমরা জানি যে PCOD এর সঠিক কারণগুলি গবেষকরা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেননি, তারা এখনও তাদের উপর কাজ করছেন, যদিও এটি বংশগত, জেনেটিক, জীবনধারা এবং পরিবেশগত কারণগুলির সংমিশ্রণ জড়িত বলে বিশ্বাস করা হয়।
PCOD নির্ণয়ের জন্য, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং পরীক্ষাগার পরীক্ষার সমন্বয় বিবেচনা করেন। এখানে PCOD-এর জন্য অনুসরণ করা ডায়াগনস্টিক প্রক্রিয়ার একটি ওভারভিউ রয়েছে:

  1. চিকিৎসা ইতিহাস: ডাক্তার আপনার মাসিকের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করে শুরু করবেন, যার মধ্যে আপনার মাসিকের নিয়মিততা, কোন মিস হওয়া পিরিয়ড এবং অন্যান্য উপসর্গ যেমন হিরসুটিজম (অতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি) বা ব্রণ রয়েছে। তারা PCOD বা অন্যান্য হরমোনজনিত ব্যাধির আপনার পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
  2. শারীরিক পরীক্ষা: ডাক্তার PCOD-এর লক্ষণগুলি পরীক্ষা করার জন্য একটি শারীরিক পরীক্ষা করবেন, যেমন অতিরিক্ত চুল বৃদ্ধি, ব্রণ, বা ইনসুলিন প্রতিরোধের লক্ষণ (যেমন, ওজন বৃদ্ধি, ত্বকের পরিবর্তন)। তারা আপনার রক্তচাপ পরিমাপ করতে পারে এবং আপনার বডি মাস ইনডেক্স (BMI) গণনা করতে পারে।
  3. শ্রোণী পরীক্ষা: একটি পেলভিক পরীক্ষা সাধারণত প্রজনন অঙ্গ মূল্যায়ন করা হয়। ডাক্তার ডিম্বাশয়ের কোন বৃদ্ধি বা সিস্টের উপস্থিতির জন্য পরীক্ষা করবেন।
  4. রক্ত পরীক্ষা: বিভিন্ন রক্ত ​​​​পরীক্ষা হরমোনের মাত্রা মূল্যায়ন করতে এবং অন্যান্য শর্তগুলি বাতিল করতে ব্যবহৃত হয়। এই পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:
  • হরমোনের মাত্রা: হরমোনের মাত্রা পরিমাপ করার জন্য রক্ত ​​পরীক্ষা করা যেতে পারে, যেমন ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH), লুটেইনাইজিং হরমোন (LH), টেস্টোস্টেরন, এবং ডিহাইড্রোপিয়ানড্রোস্টেরন সালফেট (DHEAS)। এন্ড্রোজেন (পুরুষ হরমোন) এর উচ্চ মাত্রা প্রায়ই PCOD-তে দেখা যায়।
  • গ্লুকোজ এবং ইনসুলিনের মাত্রা: ইনসুলিন প্রতিরোধের মূল্যায়ন করার জন্য উপবাসের রক্তে গ্লুকোজ এবং ইনসুলিনের মাত্রা পরিমাপ করা যেতে পারে, যা সাধারণত PCOD-এর সাথে যুক্ত।
  • লিপিড প্রোফাইল: রক্তের লিপিড মাত্রা, কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড সহ, কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকির কারণগুলি মূল্যায়ন করতে পরীক্ষা করা যেতে পারে।
  • থাইরয়েড ফাংশন: থাইরয়েড হরমোন উত্তেজক (TSH) মাত্রা পরিমাপ করা যেতে পারে থাইরয়েড ব্যাধিগুলিকে বাতিল করার জন্য, যা PCOD উপসর্গগুলিকে অনুকরণ করতে পারে।

5. পেরেকিক আল্ট্রাসাউন্ড: একটি পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড প্রায়ই সিস্টের উপস্থিতির জন্য ডিম্বাশয় পরীক্ষা করার জন্য সঞ্চালিত হয়। আল্ট্রাসাউন্ড ডিম্বাশয়ের আকার এবং চেহারা এবং জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াল আস্তরণও মূল্যায়ন করতে পারে।

2003 সালে রটারডাম কনসেনসাস PCOD ডিসঅর্ডার নির্ণয়ের জন্য মানদণ্ডের একটি সেট স্থাপন করে। উল্লেখিত মানদণ্ড অনুসারে, PCOD নির্ণয়ের জন্য নীচে দেওয়া তিনটি পরিমাপের মধ্যে অন্তত দুটির উপস্থিতি প্রয়োজন:

  • অনিয়মিত বা অনুপস্থিত মাসিক চক্র: এটি বিরল মাসিক বা পিরিয়ডের মধ্যে দীর্ঘ বিরতি বোঝায়।
  • হাইপারঅ্যান্ড্রোজেনিজমের ক্লিনিকাল এবং/অথবা জৈব রাসায়নিক লক্ষণ: এর মধ্যে রয়েছে হিরসুটিজম (অতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি), ব্রণ বা রক্তে এন্ড্রোজেনের উচ্চ মাত্রার মতো লক্ষণ।
  • পলিসিস্টিক ডিম্বাশয়: এটি আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়, যেখানে ডিম্বাশয় বর্ধিত হতে পারে এবং একাধিক ছোট সিস্ট থাকতে পারে।

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে PCOD রোগ নির্ণয় শুধুমাত্র ডিম্বাশয়ে সিস্টের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে নয়। অনুরূপ উপসর্গের অন্যান্য কারণ, যেমন থাইরয়েড ব্যাধি বা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি অস্বাভাবিকতা, বাতিল করা উচিত।
PCOD-এর এই উপসর্গগুলি অন্যান্য অবস্থার ইঙ্গিতও হতে পারে এবং একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের দ্বারা সঠিক নির্ণয় করা উচিত। PCOD নির্ণয় করা হলে, ডাক্তার PCOD সমস্যার জন্য চিকিত্সা নিয়ে আলোচনা করবেন এবং আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজন এবং লক্ষ্যগুলির সাথে ব্যক্তিগতকৃত করবেন। এটিও বিশ্বাস করা হয় যে PCOD চিকিত্সা, যেমন জীবনধারা পরিবর্তন, স্বাস্থ্যকর খাদ্য অনুসরণ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওষুধ, PCOD এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণগুলি পরিচালনা করতে পারে। যাইহোক, PCOD চিকিত্সার জন্য আপনার বিশেষজ্ঞের সাথে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং ফলোআপ সবসময় পরামর্শ দেওয়া হয় এবং প্রয়োজনীয়।

PCOD সংক্রান্ত সমস্যা কীভাবে শনাক্ত করা যায়?

আপনি PCOD সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত বলে মনে করলে, বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে অভিজ্ঞ ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ পেশাদারের সাথে আলোচনা করা অবশ্যই প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ, মেডিকেল ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা ও ল্যাবরেটরি টেস্টের সংযুক্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করেই সাধারণত PCOD সংক্রান্ত সমস্যার শনাক্তকরণ করা সম্ভব হয়। এগুলির মধ্যে পড়ে:

  1. হরমোন লেভেল নিরূপণ করার জন্য রক্ত পরীক্ষা: রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন, লুটিয়ানাইজিং হরমোন (LH) ও ফলিকলকে উত্তেজিত বা স্টিমুলেট করা হরমোন (FSH)-এর মতো হরমোনের লেভেল পরিমাপ করা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই PCOD সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে টেস্টোস্টেরন ও LH হরমোনের লেভেল অনেক উচ্চ মাত্রায় থাকে।
  1. আল্ট্রাাসাউন্ড: শরীরের পেলভিক এরিয়ার আল্ট্রাসাউন্ড করলে তা ডিম্বাশয়কে ভালো করে দেখায় এবং তার ফলে যেকোনও ধরনের সিস্ট ও ডিম্বাশয়ের আকারে কোনও অস্বাভাবিকত্ব থাকলে তা সহজেই ধরা পড়ে।
  1. গ্লুকোজ সহনশীলতার পরীক্ষা: শরীর কীভাবে গ্লুকোজ বা শর্করা প্রসেস করে তা এই পরীক্ষা পরিমাপ করে এবং এর দ্বারা শরীরে কোনও ইনসুলিন সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা থাকলে তাও ধরা পড়ে।

PCOD সংক্রান্ত সমস্যার চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি কী কী?

সাধারণভাবে দেখতে গেলে, PCOD সংক্রান্ত সমস্যার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হয় না বললেই চলে। তবে এই রোগের বিভিন্ন উপসর্গ ম্যানেজ করা ও প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করার জন্য বিভিন্ন চিকিৎসা বিকল্প উপলভ্য রয়েছে। আপনার ব্যক্তিগত ও নির্দিষ্ট প্রয়োজন ও লক্ষ্যের উপর নির্ভর করেই চিকিৎসা প্ল্যান স্থির করা হয়। সাধারণত গ্রহণ করা হয় এমন কিছু চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপারে এখানে আলোচনা করা হল:

  1. জীবনশৈলীতে করা কয়েকটি পরিবর্তন: জীবনশৈলীতে স্বাস্থ্যপ্রদ কিছু বিকল্প নিয়ে তা নিঃসন্দেহে PCOD সংক্রান্ত উপসর্গের উপরে প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন, হোল গ্রেন-সমৃদ্ধ সুষম ডায়েট প্ল্যান, স্ট্রেস বা মানসিক টেনশন ম্যানেজ করার বিভিন্ন কৌশল ও পর্যাপ্ত ঘুমের মতো বিভিন্ন বিষয় পড়ে।
  1. ওষুধপত্র: আপনার ঋতুচক্র নিয়ন্ত্রণ করতে, চুল বা লোমের অত্যধিক বৃদ্ধি কম করতে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্রণ বা ফোঁড়া হওয়া আটকাতে অথবা ইনসুলিন সংক্রান্ত সংবেদনশীলতাকে আরও উন্নত করতে আপনার ডাক্তার কিছু ওষুধ খাওয়ার সাজেশন দিতে পারেন।
  1. প্রজনন বিষয়ক সহায়ক কৌশল (ART): আপনি গর্ভধারণ করার জন্য মনস্থির করলে, ডাক্তারের পরামর্শ মতো আপনার শরীরে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) বা ইনট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন (IUI)-এর মতো প্রজনন সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রক্রিয়া চালানো হতে পারে।
  1. সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করা: কিছু ক্ষেত্রে, সিস্ট সরিয়ে দেওয়া, ওভিউলেশন বা ডিম্বাণু পরিস্ফূটনকে উন্নত করা বা অন্যান্য আভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান করার জন্য সার্জারি করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।

এটি মনে রাখা দরকার যে PCOD সংক্রান্ত সমস্যার ধরন প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হয় এবং তাই তাদের জন্য যে চিকিৎসা পদ্ধতি স্থির করা হয়, তা একই ধরনের হয় না। তাই আমাদের এমন কোনও স্বাস্থ্য পরিষেবা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো চলা উচিত যিনি আপনার স্বতন্ত্র প্রয়োজনকে বুঝে আপনার জন্য একটি কাস্টমাইজ করা চিকিৎসা প্ল্যান তৈরি করতে পারবেন।

উপসংহার

PCOD সংক্রান্ত পরিস্থিতি ম্যানেজ করা কখনও কখনও কঠিন হয়ে পড়ে একথা স্বীকার করেও বলা যায় যে উপযুক্ত ও যথাযথ সহায়তা ও চিকিৎসা প্রণালীর মাধ্যমে আপনি নিজের জীবন সুস্থতার সাথে বাঁচতে সমর্থ হবেন এবং একটি পরিবারের সূচনাও করতে পারবেন। আপনার মধ্যে PCOD অথবা বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কিত কোনও সমস্যা আপনার মধ্যে দেখা দিলে, আমাদের বিড়লা ফার্টিলিটি ও আইভিএফ-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ করতে দেরি করবেন না। আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম PCOD সংক্রান্ত জটিলতাগুলিকে সম্যকভাবে বোঝেন এবং আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুসারে আপনার জন্য কাস্টমাইজ করা ফার্টিলিটি বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করেন। তাই আশাবাদী ভবিষ্যতের দিকে আপনার যাত্রায় এই প্রথম পদক্ষেপটিকে অবহেলা করবেন না।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন:

  • PCOD সংক্রান্ত সমস্যার সম্পূর্ণ নিরাময় কি সম্ভব?

PCOD, বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম যা একটি ক্রনিক শারীরিক পরিস্থিতি এবং এর সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। তবে, উপযুক্ত চিকিৎসা ও জীবনশৈলীতে করা পরিবর্তনের মাধ্যমে, এর উপসর্গগুলিকে প্রয়োজনীয় মাত্রায় ম্যানেজ করা সম্ভব হয়। আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে আপনার জন্য কাস্টমাইজ করা চিকিৎসা পদ্ধতির সুবিধা আপনি আমাদের ক্লিনিকে পাবেন যার মাধ্যমে আপনার উপসর্গগুলিকে দূর করে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বজায় রাখা ও তা আরও উন্নত করে তোলা আপনার পক্ষে সম্ভবপর হবে।

  • PCOD-এর কারণে মহিলাদের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কিত সমস্যা কেন দেখা দেয়?

প্রধানত PCOD-এর কারণে শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, তার সক্রিয় প্রভাবে ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর পরিস্ফূটনের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং তার ফলে মাসিক ঋতুচক্র অনিয়মিত অথবা কারও কারও ক্ষেত্রে একদমই অনুপস্থিত থাকে। এর ফলে PCOD সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত মহিলারা স্বাভাবিকভাবে সন্তান ধারণ করতে সক্ষম হন না। তবে নানা ওষুধপত্র বা প্রজনন ক্ষমতার বিকাশের জন্য সহায়ক কৌশলের (যেমন IVF এবং অন্যান্য কৌশল) মতো উপযুক্ত মেডিকেল মধ্যস্থতার মাধ্যমে গর্ভধারণ করানো সম্ভব হয়।

  • Is PCOD কি শুধুমাত্র মহিলাদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়?

যদিও PCOD সংক্রান্ত সমস্যা প্রাথমিকভাবে মহিলাদেরই প্রভাবিত করে, তবে এটি মনে রাখা প্রয়োজন যে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সমস্যা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতার উপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। টেস্টোস্টেরন বা ইনসুলিনের মতো হরমোন বেশি মাত্রায় শরীরে থাকলে, পুরুষদেরও শুক্রাণুর কোয়ালিটি ও পরিমাণ, দুই-ই হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। আমাদের ক্লিনিকে পুরুষ ও মহিলা, উভয়ের জন্যই বন্ধ্যাত্ব সংক্রান্ত সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে চিকিৎসা প্ল্যান ও তার সংশ্লিষ্ট সমাধান প্রদান করা হয়।

Our Fertility Specialists